উপাচার্যের প্রতি বিমুখ ছাত্রছাত্রীদের আলোচনায় ডেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটাতে চেয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই উদ্দেশ্যে এ বার সেখানকার শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা চাইছেন মন্ত্রী।
সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য পার্থবাবু মঙ্গলবার যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র উদ্দেশে আবেদন জানান। ঘেরাও তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পুলিশের তাণ্ডবের পরে দীর্ঘ আন্দোলনের ফাঁস থেকে যাদবপুরকে বার করে আনতে মন্ত্রী বলেছিলেন, পড়ুয়ারা কী চান, সেই বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে। দরজা তো বন্ধ নয়। অনেক পড়ুয়া মনে করেছিলেন, সমাবর্তনের আগে আলোচনায় বসে মন্ত্রী আসলে ওই অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে চাইছেন। কারণ, বয়কটের ঘোষণা না-করলেও পড়ুয়ারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সমাবর্তনে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর হাত থেকে শংসাপত্র নেবেন না। জুটা এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছে, তারা সমাবর্তন বয়কট করছে। এই অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ দিন জানান, আলোচনায় সমস্যা মেটানো যায়।
ছাত্রছাত্রীরা জানান, মন্ত্রী সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করা হবে। একই উত্তর জুটা-র। ওই সংগঠনের সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বলেন, “মন্ত্রী তো সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলেছেন। আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। তাই এর ভিত্তিতে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে উনি যদি সরাসরি কোনও বার্তা দেন, সেটা নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।”
২৪ ডিসেম্বর, প্রতিষ্ঠা দিবসেই যাদবপুরের সমাবর্তন হওয়ার কথা। উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে ওই অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জুটা জানিয়ে দিয়েছে, ২৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে তাদের সদস্যেরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের শেষে পার্থবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, জুটা-র সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কী বলবেন তিনি?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি জুটা-র কাছে আবেদন করব, যাতে তাঁরা সমাবর্তনের মতো একটি অনুষ্ঠান বয়কট না-করেন। তাঁদের দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। তা নিয়ে আলাপ-আলোচনায় আসুন তাঁরা। আমি তাঁদের সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্ত ফের ভেবে দেখতে বলব।” সমাবর্তন ক্যাম্পাসে হবে, নাকি বাইরে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী জানান, সমাবর্তন হবে ক্যাম্পাসেই। তিনি সেই সঙ্গেই জানিয়েছিলেন, কেউ সমাবর্তন বয়কট করতে চাইলে সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। তখনও অবশ্য সমাবর্তন বয়কট করার কথা ঘোষণা করেনি জুটা। পরে যখন জুটা-র সদস্যেরা নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান, তখন আবার শিক্ষামন্ত্রীই বলেছিলেন, “জুটা একটি স্বাধীন সংগঠন। এই নিয়ে আমি কী বলব?”
কিন্তু শিক্ষকেরা সমাবর্তন বয়কট করলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির পক্ষে আদৌ ভাল হবে না বুঝেই মন্ত্রী এ বার আবেদনের পথ ধরেছেন বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে। তাঁরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আজ, বুধবার যাদবপুর অঞ্চলে পথসভাও হবে।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, ইংরেজির শিক্ষিকা তথা জুটা-র সাধারণ সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা গুপ্তের ‘রেডিও জেইউ’ প্রকল্প খতিয়ে দেখতে উপাচার্যের গড়া তদন্ত কমিটির বিরোধিতা করে বুধবার রেজিস্ট্রারকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তা খতিয়ে না-দেখে প্রকল্প এগোতে দেওয়া ঠিক হবে না। যদিও অভিযোগগুলি কী, তা জানাননি তাঁরা। জুটা-র অভিযোগ, নীলাঞ্জনাদেবী বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলেই উপাচার্য তাঁর প্রকল্প আটকে দিতে চাইছেন।
প্রেসিডেন্সির সমাবর্তন ২১শে
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে ২১ ডিসেম্বর, রবিবার। ২০১১-য় ছাত্র ভর্তি শুরু হওয়ার পরে প্রেসিডেন্সি থেকে এ বছরই স্নাতকদের প্রথম ব্যাচ বেরিয়েছে। সেখানকার স্নাতকেরা এই প্রথম শংসাপত্র পেতে চলেছেন। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন হয়। তবে সে-বার শুধু স্নাতকোত্তরের ছাত্রছাত্রীদেরই শংসাপত্র দেওয়া হয়। এ বার স্নাতক-স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ৮৫৪ জনকে ডিগ্রি ও শংসাপত্র দেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy