Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভক্তবালা-কাণ্ডে আচমকা সাসপেন্ড টিএমসিপি নেতা

নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছে টাকা নেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা তন্ময় আচার্যকে সাসপেন্ড করল সংগঠন। বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা।

তন্ময় আচার্য

তন্ময় আচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছে টাকা নেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা তন্ময় আচার্যকে সাসপেন্ড করল সংগঠন।

বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় সংগঠনের নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ দিন তন্ময়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের এ বার কী হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

চাপড়ার এই কলেজে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পড়ুয়া ভর্তির ঘটনায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে আগেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, সেখানে ছাত্র ভর্তিতে টাকার লেনদেন হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তবে এ দিন তন্ময়কে টিএমসিপি সাসপেন্ড করেছে শুনে সেই শিক্ষামন্ত্রীরই প্রতিক্রিয়া, “শঙ্কু যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে ঠিক কাজই করেছে।”

তা হলে এ বার কি তিনি অভিযোগকারী পড়ুয়াদের তন্ময়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন? সরাসরি জবাব না দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও ধরনের বেআইনি কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তদন্তে যিনিই দোষী প্রমাণিত হন, তিনি ছাড় পাবেন না।”

তন্ময় আচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ রকম কোনও খবর আমার জানা নেই। তাই কিছু বলতে পারব না।” টিএমসিপি-র নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের বক্তব্য, “রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি জানেন।”

গত জুন মাসে ছাত্র-ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ভক্তবালা বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করে। এর পরেই কলেজের পরিচালন সমিতির তরফে অমর বিশ্বাস অভিযোগ করেন, টিএমসিপি নেতা তন্ময় আচার্যের চাপে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। অতিরিক্ত পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন পেতে অসুবিধা হবে না বলে তন্ময় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন অমরবাবু। কলেজের অতিরিক্ত ৩৯ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৭ জন লিখিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অভিযোগ জানান, তাতেও অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ছিল তন্ময়।

তবে টিএমসিপি গোড়া থেকেই তন্ময়ের পাশে ছিল। নদিয়া জেলা টিএমসিপি থেকে তন্ময়কে সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি করার প্রস্তাবও যায় রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার গঠিত এক সদস্যের কমিটি অভিযোগের তদন্তে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তন্ময় আচার্যকে না ডাকায় অনেকেই মনে করতে থাকেন, ওই ছাত্র-নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট দেওয়া এক সপ্তাহ আগে একই অভিযোগের তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কমিটি ভেঙে দেওয়ায় তদন্তের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়ছিল অভিযোগকারীদের একাংশের।

তাই এ দিন তন্ময় সাসপেন্ড হয়েছেন খবর পেয়ে রীতিমতো অবাক ভক্তবালার অভিযোগকারীরা। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, “তন্ময়কে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে যা হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল না ওঁর কিছু হবে। তার পরে এই খবরটা অবাক হওয়ার মতোই।”

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু বলেন, “এটা সংগঠনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে মন্তব্য করব না।”

তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা কলেজ-কর্তা অমর বিশ্বাস বলেন, “প্রথম থেকেই বলছিলাম, তন্ময় দুর্নীতিতে জড়িত। এ বার প্রমাণ হবে, আমি কোনও দোষ করিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE