Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোট দেওয়াই হল না, গেরো রহস্যের মেরো

পোলিং অফিসারের হাতে ধরা ভোটার তালিকায় তাঁর নামের উপর ‘মেরো’ সিলমোহর। MERO। ভোটটা তাই শনিবার দিতে পারলেন না ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায়। সত্তর পেরোনো মানুষটি গত চল্লিশ বছর ধরে সল্টলেকে ভোট দিচ্ছেন। এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হল তাঁকে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

পোলিং অফিসারের হাতে ধরা ভোটার তালিকায় তাঁর নামের উপর ‘মেরো’ সিলমোহর। MERO। ভোটটা তাই শনিবার দিতে পারলেন না ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায়। সত্তর পেরোনো মানুষটি গত চল্লিশ বছর ধরে সল্টলেকে ভোট দিচ্ছেন। এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হল তাঁকে।

সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ইন্দুভূষণবাবুর বাড়ি সল্টলেকের এবি ব্লকে। লাগোয়া কমিউনিটি সেন্টারের বুথে ভোটার স্লিপ হাতে নিয়ে সকাল সাতটাতেই ভোট দিতে যান তিনি। কিন্তু ভোটকর্মীদের স্লিপ দেখানোর পর ওই বুথের ফার্স্ট প্রিসাইডিং অফিসার সাফ জানিয়ে দেন, ভোট দিতে পারবেন না ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায়। কারণ, ভোটার তালিকায় তাঁর নামের উপর মারা আছে ‘মেরো’ সিলমোহর।

‘মেরো’ ছাপের মানে কী? কেনই বা তিনি বৈধ ভোটার হয়েও নিজের ভোট দিতে পারবেন না, এই সব প্রশ্ন করেও প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাননি ওই বৃদ্ধ। এর প্রতিবাদ জানাতে কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রের পাশেই ঠায় বসেছিলেন। বেলা ১২টা নাগাদ দেখা হতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন। বললেন, ‘‘গত ৪০ বছর ধরে এখানে ভোট দিচ্ছি। এ বারই প্রথম ভোট দিতে পারলাম না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে সব জানিয়েছি। কেন আমাকে অন্যায় ভাবে ভোট দিতে আটকানো হল, সেটা আমি জানতে চাই। আমি আমার ভোটটা দিতে চাই।’’

ইন্দুবাবু একা নন। ‘মেরো’-র গেরোয় ভোট দিতে পারেননি ওই ব্লকেরই অলকানন্দা গুহ। অথচ গত বছর লোকসভা নির্বাচনেও তিনি ভোট দিয়েছেন। তাঁকেও জানিয়ে দেওয়া হয়, ভোটার তালিকায় নামের উপরে ‘মেরো’ ছাপ মারা আছে বলে ভোট দেওয়া যাবে না। একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন ওই ব্লকের সব্যসাচী পাণ্ডেও। শুধু ওই একটি বুথেই (পার্ট নম্বর ১২৮) ক্রমিক নম্বর ২১৫, ২৬৫, ২৬৬, ৩১৪, ৪০৬, ৪০৭-সহ কয়েক জনের নামের উপরে ‘মেরো’ সিলমোহর রয়েছে।

বঞ্চিত ওই ভোটারদের বক্তব্য, কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর বুথে ঢুকে তাঁদের শুনতে হল, ভোট দিতে পারবেন না। অথচ প্রিসাইডিং অফিসার কোনও ব্যাখ্যাই দেননি বলে তাঁদের অভিযোগ। সল্টলেকের বাসিন্দা প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক তপন অগ্রবালের দাবি, সল্টলেকের বহু বুথেই ভোটার তালিকায় এই রকম অসংখ্য ভোটারের নামের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ‘মেরো’ ছাপ মেরে তাঁদের বুথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বভাবতই বিরোধীদের সন্দেহ, বেছে বেছে তাদের ভোটার বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, এমন মানুষদের নামের উপরেই মেরো ছাপ মারা হয়েছে।

‘মেরো’ সিলমোহরের অর্থ কী?

ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চেয়ে কোনও জবাব মেলেনি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের এক্তিয়ারভুক্ত এবং তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিতে হবে। আর রিটার্নিং অফিসারের মোবাইলে বার বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

তবে রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মেরো’-র পুরো কথা হল, মিউনিসিপ্যাল ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার। যেখানে ভোট হচ্ছে, সেখানকার সদর মহকুমা প্রশাসকই ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন, বাদ ও সংশোধন করে থাকেন। তিনিই ‘মেরো’। এবং ভোটার তালিকায় কারও নামের উপর ‘মেরো’ সিলমোহর থাকার অর্থ, অতীতে তিনি সেখানকার ভোটার ছিলেন, তবে এখন আর নন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ভোটার মারা গেলে বা কেউ অন্য ঠিকানায় চলে গেলে পুরনো ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ার কথা। কিন্তু সেটা না হলে কেউ ‘মেরো’-র কাছে অভিযোগ জানাতেই পারেন। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাচাই করার পর অভিযোগ ঠিক বলে জানা গেলে সংশ্লিষ্ট ভোটার তালিকায় সেই ভোটারের নামের উপর ‘মেরো’ সিলমোহর দেওয়া হয়। যাতে তিনি ভোটটা না দিতে পারেন।

কিন্তু ইন্দুভূষণ, অলকানন্দাদের দাবি, তাঁদের কারও ঠিকানা বদল হয়নি, তাঁরা প্রত্যেকেই জীবিত। তা হলে তাঁদের নামের উপর এই সিলমোহর পড়ল কেন?

এর উত্তর কেউ দিচ্ছেন না।

পড়ুন: পাছে দাপট কমে যায়, শাসকের ভরসা তাণ্ডবে

পড়ুন: বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা

পড়ুন: দিনভর চলল ‘ভোট-লুঠ’, সব দেখেও সুশান্ত শান্তই

পড়ুন: সাংবাদিক নিগ্রহের নিন্দা, গ্রেফতারির দাবি

পড়ুন: ভোট করাল ভজাইরা, পাহারা দিল পুলিশই

পড়ুন: এ রকম ‘পিসফুল’ ভোটই ভাল, তাই না!

পড়ুন: ইহারা জননীর গর্ভের লজ্জা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE