সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দলের হাতে থাকা সিউড়ি পুরসভার নানা ‘দুর্নীতি’র খতিয়ান দিয়ে আগেই তিনি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। দিয়েছিলেন দল ছাড়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও। এ বার সরাসরি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন সিউড়ির ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ।
সোমবার সিউড়ি ২ ব্লকের বিদায়পুর গ্রামে তৃণমূলের এক দলীয় সভার পরে স্বপনকান্তি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, “নেতা বা বিধায়কেরা নন, কর্মীরাই হলেন দলের আসল সম্পদ। স্বপন থাকল কি গেল, তাতে দলের কিছু যায় আসে না। স্বপন কী বলল, তা ওঁর নিজের ব্যাপার। তবে, তৃণমূলকে মেরুদণ্ডহীন বলার অধিকার ওঁকে কে দিয়েছে? ও নিজেই মেরুদণ্ডহীন!” অনুব্রত আরও দাবি করেন, “উনি (স্বপন) অসুস্থ। চিকিৎসকেরা ওঁকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। দিন কয়েক আগে উনিই আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘দাদা আমি কখন কী বলি ঠিক নেই’।”
মঙ্গলবার তারই প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা অস্বীকার করেন স্বপনবাবু। তাঁর দাবি, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে তিনি অনুব্রতর সঙ্গে সাক্ষাৎ তো দূর অস্ত, ফোনেও যোগাযোগ করেননি। তা হলে তাঁকে ফোন করে ওই সব বলার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর আরও বক্তব্য, “আমার মেরুদণ্ড আছে কি নেই, জেলা সভাপতিকে তার জবাব দেব না। দলের নেত্রী তা ভাল করেই জানেন!”
সম্প্রতি দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন সিউড়ির এই বিধায়ক। তাঁর দাবি, জল প্রকল্প এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখার আগে দলীয় স্তরে কেলেঙ্কারির কথা জানিয়েও যে বিশেষ লাভ হয়নি, তা নিয়েও ক্ষোভ চেপে রাখেননি বিধায়ক। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, গরমিলের কথা আঁচ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সুডা) কাছে অন্তত ৫টি চিঠি লেখেন। একটিরও জবাব পাননি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে স্বপনবাবু দাবি করেছেন, পুরসভার দুর্নীতির চোটেই লোকসভা ভোটে সিউড়ি শহরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতে বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। চিঠিতে তৃণমূল বিধায়ক স্পষ্টই জানিয়ে দেন, দুর্নীতি দমনে তিনি শেষ বারের মতো দলকে সক্রিয় হতে অনুরোধ করছেন। এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে তাঁকে ‘অনন্যোপায় হয়েই অন্য সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার স্বপনবাবু আরও জানান, সিউড়ির জল প্রকল্প নিয়ে সরকার সদর্থক ভূমিকা না নিলে তিনি নিজেই আদালতে যাবেন।
ওই চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসতেই চাপে পড়ে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই অনুব্রতর ব্যাখ্যা ছিল, “সিউড়ি পুরসভায় দুর্নীতি হয়নি। স্বপন থাকলেন কি গেলেন তাতে কিছু যায় আসে না।” এ দিন অনুব্রতকে এক হাত নেন স্বপন। অনুব্রত তাঁকে ‘অসুস্থ’ বলেছেন জেনে বেজায় চটেছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, “ডাহা মিথ্যে কথা। কে সুস্থ আর কে অসুস্থ, তা দল আর জেলার মানুষ জানেন।” এর পরেই দলের জেলা সভাপতির উদ্দেশে বিধায়কের কটাক্ষ, “আসলে ওঁর শরীরে তো বেশি অক্সিজেন ঢোকে না। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ঢোকে। তাই ভুল বকছেন!”
অনুব্রতর মাথায় অক্সিজেন কম যায় বলে দাবি করেছিলেন খোদ মমতাই! পুলিশের উপরে বোমা মারা এবং নির্দলদের হুমকি নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের যুব সম্মেলনে মমতা নিজের ‘আস্থাভাজন’ অনুব্রতর সমর্থনে বলেন, “কেষ্ট খুব ভাল সংগঠক। তাই কেউ কেউ ওর পিছনে লাগে। আসলে কেষ্টর মাথায় অক্সিজেন কম যায়। ওকে অক্সিজেন নিয়ে ঘুরতে হয়।”
এ দিন নাম না করে দলনেত্রীর সেই বক্তব্যই টেনে আনেন স্বপনবাবু। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলে তাঁর শরীরে অক্সিজেন বেশি যায়। মাথাও ঠিক থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy