Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো নথি দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে চুরি আমানত, শ্রীঘরে দুই জালিয়াত

ফিক্সড ডিপোজিট ছিল বহরমপুরের ব্যাঙ্কে। মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তা ভাঙিয়ে নিয়ে সরানো হল ব্যাঙ্কের সোদপুর শাখায়। শুধু সরানোই নয়, পাঁচ দিনের মধ্যে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হল ১১ লক্ষ টাকা! পাঁচ দিনে এমন টাকা তোলার ঘটনা দেখেই সন্দেহ হয় ব্যাঙ্কের। অ্যাকাউন্টের মালিক প্যান কার্ড ব্যাঙ্কে জমা না দেওয়ায় এটিএম মারফত টাকা তোলা বন্ধ রেখেছিল ব্যাঙ্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

ফিক্সড ডিপোজিট ছিল বহরমপুরের ব্যাঙ্কে। মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তা ভাঙিয়ে নিয়ে সরানো হল ব্যাঙ্কের সোদপুর শাখায়। শুধু সরানোই নয়, পাঁচ দিনের মধ্যে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হল ১১ লক্ষ টাকা!

পাঁচ দিনে এমন টাকা তোলার ঘটনা দেখেই সন্দেহ হয় ব্যাঙ্কের। অ্যাকাউন্টের মালিক প্যান কার্ড ব্যাঙ্কে জমা না দেওয়ায় এটিএম মারফত টাকা তোলা বন্ধ রেখেছিল ব্যাঙ্ক। দিন কয়েক পরে তদন্তে জানা গেল, ভুয়ো নথি দিয়ে অন্য এক জনের ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফিক্সড ডিপোজিটের আসল মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে ধরা পড়েছে দুই জালিয়াত।

শুক্রবার ব্যারাকপুরের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর জানান, ধৃতদের নাম বিকাশ সরকার ও সুরজিৎ সেন। দু’জনেই আরও কয়েকটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে যুক্ত। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা দোষ কবুল করেছে। মুর্শিদাবাদে এই চক্রটি আরও একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করেছে বলে জেনেছে পুলিশ। ওই চক্রের আরও প্রায় দশ জনের খোঁজ চলছে।

বৃহস্পতিবারই কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা ভুয়ো নথি দিয়ে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে। সোদপুরের এই ঘটনার সঙ্গে তাদেরও যোগ আছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর।

পুলিশ জানায়, এই জালিয়াতির শিকার সুমিত সরকারের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সোদপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। বহরমপুরে ওই ব্যাঙ্কের শাখায় তাঁর একটি ৫২ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ছিল। সুমিতবাবু কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকেন। গত ২৯ অক্টোবর দেশে ফেরেন। সে দিনই সোদপুরের ব্যাঙ্কের শাখায় তিনি টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি গোটা ঘটনা জানতে পারেন। কী ভাবে?

সুমিতবাবু জানান, তিনি ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যাওয়ার পরেই কয়েক জন কর্মী তাঁর পরিচয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তিনি নিজের পরিচয়পত্র দেখানোর পরে জানতে পারেন, তাঁর বহরমপুর শাখার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে এই শাখার একটি নতুন অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পরে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ৯ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে ১১ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই ওই অ্যাকাউন্টটিকে সন্দেহজনকের তালিকায় রেখেছিল ব্যাঙ্ক। সুমিতবাবুর দাবি, “ওই নতুন অ্যাকাউন্টে জন্মতারিখ ও বাড়ির ঠিকানা তাঁরই। কিন্তু ছবি অন্য এক ব্যক্তির।”

এর পরেই সুমিতবাবু বহরমপুরের ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেন। তাঁর বক্তব্য, ওই শাখার ম্যানেজার তাঁর পরিচিত। এই অ্যাকাউন্ট বদল ও টাকা জালিয়াতির ঘটনা শুনে তিনিও চমকে যান। এর পরে সোদপুর শাখার লোকেরাই ওই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ব্যক্তিকে টোপ দিয়ে ডেকে আনেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্কে এলে ঘোলা থানার পুলিশ তাকে পাকড়াও করে।

তদন্তকারীদের সন্দেহ, ধৃতের সঙ্গে ব্যাঙ্কের কোনও কর্মীর যোগ থাকতে পারে। সেই মারফতই তিনি সুমিতবাবুর অ্যাকাউন্ট ও পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য হাতান। অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্কের গাফিলতি রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, ভুয়ো নথি দিয়ে ব্যাঙ্ক-জালিয়াতির এই প্রবণতা সম্প্রতি বেড়ে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কিছু এলাকায় এই চক্র সক্রিয় বলেও জানতে পেরেছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার লালবাজারের হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি চক্রের বেশির ভাগ লোকই ব্যারাকপুর, সোদপুর, নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারাও বিভিন্ন ভুয়ো নথি দিয়ে ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। তার পরে সেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অন্তত তিনটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা হাতায় নেয় তারা। সেই সূত্রেই লালবাজারের গোয়েন্দারা বিভিন্ন ব্যাঙ্ককর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দার মতে, অ্যাকাউন্ট খোলা ও ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক মতো পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে না। যার সুযোগ নিচ্ছে এই জালিয়াতেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank credit card arrest two
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE