চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। দম আটকে আসছে, বুক ধড়ফড় করছে, কাঁপছে হাত-পা। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসএসকেএমের চিকিৎসকদের এমনটাই বলেছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র।
মন্ত্রী চোখে অন্ধকার দেখলেও সমর্থকেরা কিন্তু এ দিন অনেকটাই স্বস্তিতে। অন্য দিন পরিবহণ মন্ত্রী আলিপুর আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সময়ে মনমরা হয়ে থাকতেন তাঁরা। এ দিন আদালতের নির্দেশের পরে হাঁফ ছেড়ে এক জন বলেন, “যাক বাবা, দাদা তো অন্তত সিবিআইয়ের হাত থেকে বেরিয়েছেন। জেলটা আমাদের জায়গা। ম্যানেজ হয়ে যাবে।”
পরিবহণ মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, মদনবাবু এসএসকেএম হাসপাতালে গেলে সেখানে তাঁকে দেখতে যাবেন। সে যাত্রায় অবশ্য হাসপাতালে আসতে হয়নি মদনবাবুকে। কিন্তু এখন এসেছেন। সমর্থকদের আশা, এ বার অন্তত মুখ্যমন্ত্রী আসবেন দাদাকে দেখতে। আর তা হলেই ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবেন মন্ত্রী।
ক’দিন ধরেই মন্ত্রীর বিধ্বস্ত চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এ দিন আদালতে ঢোকার সময়েও রীতিমতো ক্লান্ত লাগছিল তাঁকে। আদালত চত্বরে হাতে ফুল নিয়ে এ দিনও মন্ত্রীর অনুগামীদের ভিড় ছিল। শঙ্খ ও উলুধ্বনির মাঝে ‘বাংলার দামাল ছেলে মদন মিত্র জিন্দাবাদ’ কিংবা ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান দিয়ে মন্ত্রীর গাড়িতে ফুল ছুড়ে দেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও মদনবাবুর মুখে হাসি দেখা যায়নি। কিন্তু সন্ধ্যায় আদালতের নির্দেশের পরে সমর্থক এবং সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন তিনি। তখন দাদাকে দেখে এক সমর্থকের বক্তব্য, “চাপ এখন কম। কাল টিভিতে যা দেখেছি, এমনকী কোর্টে ঢোকার সময়েও যেমন দেখেছি, তার চেয়ে দাদা এখন অনেক রিল্যাক্সড।”
জেলে ঢোকার কিছু ক্ষণ পরেই তার প্রমাণও মিলল। জেল থেকে তাঁকে সটান পাঠিয়ে দেওয়া হল এসএসকেএমে। রাজ্যের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে জেলে গিয়েও কার্যত সেখানে থাকতেই হল না তাঁকে। আলিপুর জেল সূত্রে খবর, গায়ে সাদা কাশ্মীরি শাল জড়িয়ে সংশোধানাগারে ঢোকেন মদনবাবু। বাইরে তখন তাঁর দুই ছেলে এবং গুটিকয় সমর্থক দাঁড়িয়ে। জেলের নিয়ম মেনেই তাঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জেলের অফিসে মন্ত্রীকে বসতে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি প্রথমেই কর্মী-অফিসারদের খোঁজখবর নেন। কারা কোথায় থাকেন, জানতে চান তা-ও। এর মধ্যেই জেলের অফিসারদের বলেন, “আমি খুব ক্লান্ত। সকাল থেকে তেমন কিছু খাইনি। বুকেও সকাল থেকে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।”
তত ক্ষণে মন্ত্রীকে দেখতে আসেন জেলের চিকিৎসক। তিনি দেখার পরে মন্ত্রীমশাইকে এসএসকেএমে এক বার দেখিয়ে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। জেলের এক কর্তার কথায়, “এক জন মন্ত্রী বলছেন, আমার বুকে ব্যথা করছে। দেখেও তাঁকে খুবই অসুস্থ মনে হচ্ছিল। তাই আমরা আর কোনও ঝুঁকি নিইনি। হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।” এসএসকেএমে চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখার পরে পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন। তাই ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয় মন্ত্রীকে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন মন্ত্রীকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শিবানন্দ দত্তের অধীনে ভর্তি করানো হয়। সারদা কেলেঙ্কারিতে আর এক অভিযুক্ত সৃঞ্জয় বসুর ঠিক পাশের কেবিন এসি-২-তে রাখা হয়েছে মন্ত্রীকে। চিকিৎসক শিবানন্দবাবু বলেন, “মন্ত্রী বার বার দাবি করেছেন, তাঁর বুকের উপরে অসম্ভব চাপ অনুভব করছেন। আমি আজ নিজে পরীক্ষা করতে পারিনি। কয়েক জন আরএমও পরীক্ষা করেছেন। ইসিজি-ও করা হয়েছে।” তিনি জানান, আজ, শনিবার মন্ত্রীর চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হবে। তখনই তাঁর শারীরিক অসুস্থতার বিস্তারিত কারণ জানা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy