Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই মঞ্জুলের গায়ে দুর্নীতির কাদা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর পরিচয় ছিল ঠাকুরনগরের ‘ছোট ঠাকুর’। আর মন্ত্রিসভা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণ করতে কোমর বেঁধে নামল তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার! রাজ্যের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের নতুন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বুধবার জানিয়েছেন, ওই দফতরের সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বিরুদ্ধে ওঠা তছরুপের অভিযোগের তদন্ত করবে সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর পরিচয় ছিল ঠাকুরনগরের ‘ছোট ঠাকুর’। আর মন্ত্রিসভা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণ করতে কোমর বেঁধে নামল তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার! রাজ্যের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের নতুন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বুধবার জানিয়েছেন, ওই দফতরের সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বিরুদ্ধে ওঠা তছরুপের অভিযোগের তদন্ত করবে সরকার।

দল ছাড়ার পরেই মঞ্জুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে গাইঘাটা থানায় এফআইআর করেছে তৃণমূল। সেখানে বলা হয়েছে, দলের রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়ের সাংসদ তহবিলের ২০ লক্ষ টাকা তাঁর মাধ্যমে খরচ হয়েছে। তার হিসেব মিলছে না। এ দিন মঞ্জুল জানান, এই সব অভিযোগ বা সরকারি তদন্তকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওরা যা পারে করুক। কোনও অনৈতিক কাজ করিনি।”

অভিযোগ যে সময়ের, মঞ্জুল তখন তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী। নবান্ন অবশ্য তখন এ সব নিয়ে নীরবই থেকেছে। এখন প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিজের অফিস ঘর সাজানো থেকে ঠাকুরনগরে বাড়ি তৈরি, সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে বেনিয়ম থেকে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার এমন অসংখ্য অভিযোগ তুলছে তাঁর প্রাক্তন দল ও সরকার। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত ঠাকুর। ফলে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ধসের আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তা ছাড়া, মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে মঞ্জুল নিজেও নানা মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন। সে কারণেই মঞ্জুলের বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তৃণমূলের প্রচারে এমনকী এ কথাও বলা হচ্ছে যে, প্রাক্তন ওই মন্ত্রী পাড়ার দোকানে চাউমিন খেয়ে টাকা মেটাতেন না!

বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনের ঠিক আগে মঞ্জুলের বিরুদ্ধে সরকারি স্তরে তদন্তের কথাও ঘোষণা করে বুধবার মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বিরুদ্ধে দফতরের ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে মহাকরণের দেওয়ালে এক সময় পোস্টারও পড়েছিল। বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাই তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গড়া হবে।” কিন্তু কারা অভিযোগ করল? সাবিত্রীদেবী জানান, একটি কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মঞ্জুলের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ করা হয়েছে। এ জন্যই বিভাগীয় তদন্ত করানো হবে।

যে টাকা তছরুপের কথা বলা হচ্ছে, তা কোন কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং কোন সময়ে? সাবিত্রীদেবী বলেন, “দায়িত্ব নিয়েছি সবে দু’দিন হল। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করুন, সব জানতে পারবেন।”

মঞ্জুলের বিরুদ্ধে কামান দেগেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। বছর চারেক আগে মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে তিনিই মঞ্জুলকে দলে আনেন এবং তৃণমূলের টিকিটও দেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “মুকুল রায়ের সাংসদ কোটার ২০ লক্ষ টাকা মঞ্জুলকৃষ্ণের মাধ্যমে খরচ হয়েছে। তার হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। গাইঘাটা থানায় এফআইআর হয়েছে।” একই সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “ঠাকুরনগরে উনি নাকি আট কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি তৈরি করেছেন! সেই টাকা কোথা থেকে এল, সাধারণ মানুষ তা জানতে চান।”

মঞ্জুল যত দিন তৃণমূলের মন্ত্রী ছিলেন, তখন আপনারা কিছু বলেননি কেন? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, “আগেই মঞ্জুলবাবুকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও তিনি নানা অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। ভোটের আগে মানুষকে সে সম্পর্কে জানানো আমাদের কর্তব্য।”

জেলায় বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তৃণমূল সরকার এখন আদা-জল খেয়ে মঞ্জুলবাবুর পিছনে পড়েছে। কারণ, মমতা মন্ত্রিসভার তিনিই প্রথম সদস্য, যিনি ফ্যাক্স-বার্তায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে দলকে। সে সবের ‘ফল’ তো ভুগতে হবেই!

মঞ্জুল নিজেও এ দিন বলেন, “মন্ত্রিত্ব ছেড়েছি বলেই এখন ওরা এ সব করছে। আমার এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manjulkrishna thakur bongaon choto thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE