Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মমতাকে পাল্লা, জনজাতি বোর্ড গুরুঙ্গের

একের পর এক জনজাতির জন্য পৃথক বোর্ড গড়ে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে বিভেদের রাজনীতি করছেন বলে এত দিন সমালোচনা করে এসেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

একের পর এক জনজাতির জন্য পৃথক বোর্ড গড়ে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে বিভেদের রাজনীতি করছেন বলে এত দিন সমালোচনা করে এসেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। জনসমর্থন ধরে রাখার লড়াইয়ে টিঁকতে এক ধাক্কায় ১৭টি জনজাতির জন্য বোর্ড গড়ার সিদ্ধান্ত শনিবার ঘোষণা করে দিলেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে পাহাড়ে পাঁচটি জনজাতির জন্য উন্নয়ন বোর্ড গড়েছেন। আরও দু’টি বোর্ড গড়ার চিন্তাভাবনার কথাও প্রকাশ্য সভায় জানিয়েছেন তিনি। দেখে-শুনে পাহাড়ের মানুষই ঠারেঠোরে বলতে শুরু করেছেন, দার্জিলিঙে যে এত জনজাতির বাস, তা মমতা-গুরুঙ্গ দড়ি টানাটানি না হলে কে-ই বা জানত! প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের একের পর এক বোর্ড গড়ে বরাদ্দ ঘোষণার বিরোধিতা করে এসেছেন গুরুঙ্গেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এতে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। এ ভাবে সামগ্রিক উন্নয়ন হয় না। অথচ আজ, রবিবার ১৭টি জনজাতির জন্য একযোগে বোর্ড গড়া হবে বলে সেই গুরুঙ্গই ঘোষণা করে দিলেন।

কেন এই আচমকা পরিবর্তন?

মোর্চা সূত্রের খবর, আলাদা বরাদ্দ, কাজের সুযোগ, সরকারি সুযোগ-সুবিধার টানে জনজাতির লোকজন বোর্ডগুলির দিকে ঝোঁকা শুরু করেছে। সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁদের যোগ দেওয়া তো ছিলই, এখন মুখ্যমন্ত্রীকে নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করাও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আবার বোর্ডের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের খবরও আসছিল। এই ঘোলাজলেই মাছ ধরা জরুরি বলে মোর্চা নেতারা মনে করছেন। আগামী দিনে সমতলের তরাই এলাকায় আদিবাসী বোর্ড গড়ার কথাও শোনা গিয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের গলায়।

প্রেস বিবৃতিতে গুরুঙ্গ জানান, শুক্রবারই জিটিএ সভায় পাহাড়ের ১৭টি জনজাতির জন্য বোর্ড গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুরুঙ্গ, ভুজেল, নেওয়ার, রাই, সুনয়ার, থামি, দেওয়ান, খাস, মঙ্গর, লিম্বু, তামাঙ্গ, লেপচা, শেরপা, ভুটিয়া, ইয়লমো ইত্যাদি আসছে বোর্ডের আওতায়। বোর্ডগুলিকে বছরে ৫ কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। খুব দ্রুত জনজাতিগুলির প্রতিনিধিদের ডেকে আলোচনার পরে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

রাজ্য ইতিমধ্যে লেপচা, তামাঙ্গ, শেরপা, ভুটিয়া এবং মঙ্গর বোর্ড গড়ে ফেলেছে। লিম্বু এবং রাই-দের জন্যও বোর্ড গড়ার ভাবনা রয়েছে। একই জনজাতির জন্য রাজ্য ও জিটিএ-র গড়া পৃথক বোর্ড জটিলতা তৈরি করবে না? জিটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধানের দাবি, ‘‘কোনও জটিলতা নেই। সরকারি যে সব বোর্ড হয়েছে, তার বাইরে অনেক যোগ্য লোক রয়েছেন। জিটিএ-র বোর্ডে তাঁরা থাকবেন। সরকারি বোর্ডের লোকেরাও চাইলে আসতে পারেন।’’ গুরুঙ্গের দাবি, ‘‘সরকার বিভাজন করেছে। আমরা জুড়তে চাইছি।’’

পাহাড়ের পাঁচটি বোর্ডের দায়িত্বে থাকা পদাধিকারিকেরা জিটিএ-র সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। শুধু শেরপা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিমা শেরপা বলেন, ‘‘আইনত জিটিএ এই ধরনের বোর্ড গড়তে পারে।’’ ভারতীয় গোর্খা জনজাতি সংঘর্ষ মহাসঙ্ঘের সভাপতি কাঞ্চন গুরুঙ্গ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পাহাড়ের ১১টি জনজাতির জন্য তফসিলি তকমা দাবি করেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘এটা জিটিএ-র নিজস্ব ব্যাপার। কোনও মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE