Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুকুল-আতঙ্কে ব্যারাকপুরে ভরসা দীনেশই

এক দিন দলনেত্রীর উল্টো পথে হেঁটে রেলভাড়া বাড়িয়েছিলেন তিনি। এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। রেলমন্ত্রীর শূন্য পদে বসেছিলেন নেত্রীর সেই সময়ের বিশেষ আস্থাভাজন, তৃণমূলের অলিখিত ‘নম্বর টু’।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

এক দিন দলনেত্রীর উল্টো পথে হেঁটে রেলভাড়া বাড়িয়েছিলেন তিনি। এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। রেলমন্ত্রীর শূন্য পদে বসেছিলেন নেত্রীর সেই সময়ের বিশেষ আস্থাভাজন, তৃণমূলের অলিখিত ‘নম্বর টু’। শোনা যায়, তখন থেকেই ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘বিদ্রোহী’ দীনেশের ডানা ছাঁটতে সে দিন মুকুল রায়কেই অস্ত্র করেছিলেন মমতা। রেলমন্ত্রী হয়েই যিনি বর্ধিত ভাড়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।

চাকা ঘুরে গিয়েছে একশো আশি ডিগ্রি।

সে দিনের ডান হাত মুকুল আজ নেত্রীর গলার কাঁটা। আর তাঁর দাঁত-নখ ভোঁতা করতে দীনেশই এখন অস্ত্র নেত্রীর। যদিও দীনেশের মন কতটা তৃণমূলে, তা নিয়ে দলের অন্দরেই সংশয় রয়েছে। ক’দিন আগেই প্রকাশ্যে তিনি বলেছিলেন, “মোদী সরকারকে সমর্থন করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ।” সমালোচনা করেছিলেন নেত্রীর। তার পরেও দীনেশের মন পেতে দলে সহ-সভাপতি পদ তৈরি করে দীনেশকে সেখানে বসিয়েছেন মমতা। এ বার পুরভোটে ব্যারাকপুর মহকুমায় প্রার্থী বাছাই নিয়ে এলাকার সাংসদ দীনেশের উপরেই আস্থা রাখলেন তিনি। এই মহকুমার অধীন আটটি পুরসভার প্রার্থী মনোনয়ন কমিটির চেয়ারম্যান করা হল তাঁকেই।

অথচ মমতাই এর আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কমিটির চেয়ারম্যান হবেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। এলাকার সাংসদ হবেন কমিটির একজন সদস্য মাত্র। কিন্তু ব্যারাকপুরে স্থানীয় কোনও বিধায়কের বদলে কমিটির শীর্ষে আনা হল সাংসদ দীনেশকে।

কেন? উত্তর খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসছে এক অন্য সমীকরণ।

উত্তর ২৪ পরগনার ২৬টি পুরসভার মধ্যে এ বার ২৩টিতে ভোট হবে। তার মধ্যে রয়েছে ব্যারাকপুর মহকুমার আটটি পুরসভা কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, ভাটপাড়া, নৈহাটি, গারুলিয়া, উত্তর ব্যারাকপুর, টিটাগড় এবং ব্যারাকপুর। জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, যেখানে দলীয় বিধায়ক নেই, সেখানেই দলীয় সাংসদকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হচ্ছে।

কিন্তু ব্যারাকপুর এলাকায় তো জ্বলজ্বল করছেন একাধিক তৃণমূল বিধায়ক! আসলে সমস্যাটা সেখানেই। কাঁচরাপাড়া ও হালিশহর পড়ছে বীজপুরের বিধায়ক তথা মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের এলাকায়। পাশাপাশি, ব্যারাকপুর ও টিটাগড় পুরসভার একাংশ পড়ছে মুকুল-ঘনিষ্ঠ ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের এলাকায়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে দু’জনের এক জনকেও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না দল।

মাত্র ক’দিন আগে বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুর। কিন্তু দলের অন্দরেই অভিযোগ, এই ভোটে মুকুল-শুভ্রাংশু কার্যত গা ঘামাননি। দল লড়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাঁধে ভর করে। কিন্তু পুরসভার ওয়ার্ডে সামান্য ভোটেই ফলাফল এদিক-ওদিক হতে পারে। কাজেই শুভ্রাংশু যতই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করুন বা রবিবার মধ্যমগ্রামে দলীয় সভায় আসুন, তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। শীলভদ্র কিছু দিন আগেও দিল্লিতে মুকুলের বাসভবনে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। সম্প্রতি পরিষদীয় সচিব পদও খুইয়েছেন। তার পরেও রবিবার মধ্যমগ্রামে দলীয় বৈঠকে আসেননি তিনি। যদিও মুকুল-ঘনিষ্ঠ নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক সেই বৈঠকে এসেছিলেন। দলের এক প্রভাবশালী জেলা নেতার কথায়, “মূলত শুভ্রাংশু আর শীলভদ্রের জন্যই দীনেশদাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ ওঁদের এখন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।”

বস্তুত, মুকুল-অনুগামীদের গুরুত্ব দিয়ে নেতার সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া যে চলছে, মনোনয়ন কমিটি বাছাই থেকেই তা স্পষ্ট। গোবরডাঙায় কমিটির সদস্য করা হয়েছে মুকুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দুই স্থানীয় নেতা নেতা শঙ্কর দত্ত এবং রাজীব দত্তকে। গোবরডাঙা পুরসভা পড়ে গাইঘাটা বিধানসভা এলাকায়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর দল ও পদ ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর এখানকার বিধায়কের আসনটি আপাতত শূন্য। এই এলাকায় মনোনয়ন কমিটির দায়িত্ব কিন্তু সাংসদ মমতাবালাকেও দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব পেয়েছেন গোবিন্দ দাস। মঞ্জুলের আমলে যিনি দলে কিছুটা কোণঠাসা ছিলেন বলেই শোনা যায়। এ ছাড়া, বসিরহাট, টাকি ও বাদুড়িয়ায় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস ও নারায়ণ গোস্বামীকে। নারায়ণবাবুর সঙ্গে মুকুলের সুসম্পর্ক সুবিদিত।

এক তৃণমূল নেতার কথায়, “জেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’এক জন করে হলেও মুকুল-অনুগামী রয়েছেন। টিকিট না পেয়ে এঁদের কেউ হয়তো নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। সেই আশঙ্কায় বিধায়কদের কমিটির শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু সেই ব্যাখ্যাও তো গুলিয়ে দিয়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE