Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মুকুল ঝরিয়ে তৃণমূলে শুরু হল বক্সী-যুগ

তৃণমূলে অ-মুকুলায়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার বৃত্ত সম্পূর্ণ হল! কালীঘাটে নিজের বাড়িতে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে সুব্রত বক্সীকে একক ভাবে তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জন্মলগ্ন থেকে এই পদে ছিলেন মুকুল রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

তৃণমূলে অ-মুকুলায়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার বৃত্ত সম্পূর্ণ হল!

কালীঘাটে নিজের বাড়িতে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে সুব্রত বক্সীকে একক ভাবে তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জন্মলগ্ন থেকে এই পদে ছিলেন মুকুল রায়। দলের নতুন ওয়ার্কিং কমিটি থেকেও মুকুলকে বাদ দিয়ে দিলেন মমতা।

আধ ঘণ্টারও কম সময়ের এই বৈঠকে ২৩ জনের নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতে নতুন তিন জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন নেত্রী। পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, ওই নতুন তিন মুখ হলেন ফিরহাদ (ববি) হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং নির্মল মাজি। কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন তমোনাশ ঘোষ। দলীয় সাংসদ এবং দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলির প্রধানেরা কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে থাকবেন। রাজ্যের মন্ত্রী এবং দলের জেলা সভাপতিরা থাকবেন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে। কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে ফিরহাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও শুভেন্দু অধিকারীকে।

মুকুলকে কোণঠাসা করতে তাঁর ঘনিষ্ঠদের হয় সরিয়ে, নয়তো গুরুত্ব দিয়ে কাছে টানার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা। মুকুলের সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক এক সময় মধুর ছিল না। কিন্তু দলীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মুকুল-শুভেন্দুর সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছিল। বিশেষত, দলে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানের প্রেক্ষিতে কাছাকাছি এসেছিলেন শুভেন্দু-মুকুল। মুকুলকে এক ঘরে করতে দলে নতুন করে শুভেন্দুকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেন মমতা। দলের যুব শাখার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে যে শুভেন্দুকে সরিয়েছিলেন তিনি, এ দিন নতুন কার্যকরী কমিটিতে তাঁকেই অন্যতম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করছেন মমতা! এমনকী, এ দিন বৈঠকে কার্যকারী কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিতদের তালিকায় অন্য রাজ্যের দলীয় সভাপতি ও জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রস্তাব শুভেন্দু দিয়েছেন, মমতা তা গ্রহণ করেছেন বলে দলীয় এক সূত্রে খবর। একদা মুকুল-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকেও কাছে টেনেছেন মমতা। বিধানসভায় বৃহস্পতিবার সব্যসাচী দীর্ঘক্ষণ মমতার ঘরে ছিলেন। এ দিন রাজারহাটে সব্যসাচীর নেতৃত্বে দলের মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন নেত্রীর ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, দলনেত্রীর নির্দেশেই ফিরহাদ ওই মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

এ দিন কালীঘাটের বৈঠকে এসেছিলেন অসুস্থ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রী তথা বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় সুদীপবাবুকে বৈঠকে পৌঁছে দেন। সুদীপবাবুকে পাশে বসান মমতা। তবে এ দিন কালীঘাটে দলীয় দফতরে থাকলেও বৈঠকে ছিলেন না অভিষেক। দলের এক নেতা মমতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, অভিষেককে ডাকা হবে কিনা। নেত্রী তাঁকে বলেন, “ছোটরা ছোটদের মতো থাক!” এ দিনের বৈঠকে ডেরেক, সৌগতবাবু এবং কল্যাণ থাকতে পারেননি। সংসদে বাজেট থাকায় তাঁরা বৈঠকে আসতে পারেননি বলে পার্থবাবু জানান।

মুকুল-ঝরার পর্ব নিয়ে সিপিএম কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “যে পার্টিতে গণতন্ত্র নেই, সে পার্টিতে এমন হবে। আজ এক নেতা, কাল আর এক নেতা। তৃণমূল একটা দল, যেখানে নির্বাচন নেই। নির্বাচন না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। সম্মেলন করে নেতা ঠিক করার ব্যাপারও নেই। নেত্রী মঞ্চে ঘুরে ঘুরে নেতা ঠিক করে দেন!” সিটুর বর্ধমান জেলা কমিটির সম্মেলনে ‘আক্রান্ত গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রও অ-মুকুলায়ন নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “ওঁকে তৃণমূলের আর দরকার নেই। আসলে মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukul roy tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE