বক্তৃতা-বিতর্কের পর অন্তরাল থেকে বেরিয়ে দলের সদর দফতরে হাজির হলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলতেই তিনি শনিবার সন্ধ্যায় তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে যান। প্রায় আধ ঘণ্টা মুকুলবাবুর ঘরে ছিলেন বিতর্কিত সাংসদ।
গত ১৪ জুন নিজের লোকসভা এলাকার পাঁচটি সভায় তাপসবাবুর বক্তৃতা নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চৌমুহা, তেঘড়ি, হরনগর, গোপীনাথপুরের ওই সব বক্তৃতায় তৃণমূল সাংসদ কখনও বিরোধীদের ঘরে ‘আমাদের ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন, কখনও ‘বঁটি দিয়ে গলার নলি কেটে’ দেওয়ার দাওয়াই দিয়েছিলেন। এমন বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে হইচই হলেও দলনেত্রীকে চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে যান তাপস। এ দিন মুকুলবাবুর ঘরে ঢোকার আগে তিনি বলেন, “আমি অন্যায় করেছি। তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছি।” কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, কেন তিনি ওই রকম বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার কারণ কেউ জানার চেষ্টা করেনি। চৌমুহা গ্রামে দলের এক কর্মীকে নৃশংস ভাবে খুনের বৃত্তান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “এই কর্মীর মা আমাকে শুনিয়েছিলেন, কী ভাবে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছিল।” সে কথা জানার পরেই তিনি আবেগমথিত হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেন তাপস।
দলের সদর দফতরে এলেও তাপস জানান, এখনই তিনি দিল্লিতে সংসদের অধিবেশনে বা নিজের লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে যাবেন না। বক্তৃতা-কাণ্ডের পরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাপস। তাঁর দাবি, এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। সাংসদের কথায়, “গত বছর দিল্লিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তার পর কড়া কড়া ওষুধ খেতে হচ্ছিল। এ বার আবার অসুস্থ হলাম। সেই কারণে এখন আরও কিছু দিন বিশ্রামে থাকতে হবে। চিকিৎসকরা বললে তবে দিল্লি বা কৃষ্ণনগরে যাব।”
কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন সভায় তাপস যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তা উস্কানিমূলক এবং তাতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন থানায় সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের হয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাও হয়েছে। সোমবার সেই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। ঠিক তার ৪৮ ঘণ্টা আগে কৃষ্ণনগরের সাংসদের দলীয় দফতরে হাজির হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। তবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই কৃষ্ণনগরের সাংসদকে এখন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, তাপসের ওই বক্তৃতা-বিতর্কের জেরে আদতে দলেরই মুখ পুড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy