Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাস্কেট হাতে দুষ্কৃতী, যুদ্ধ চালাচ্ছে পুলিশ

ঠিক যেন যুদ্ধক্ষেত্র! ধানজমির মধ্যে পজিশন নিয়ে সার সার খাকি আর জংলা পোশাক। মেঠো আলের আড়ালে শুয়ে এসএলআর, ইনসাস এবং রিভলভারের নিশানা তাক্ করে পুলিশ। সঙ্গে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে, মুখে গামছা বাঁধা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদল। যাদের হাতে বোমা আর মাস্কেট। দু’পক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই। ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে সবুজ মাঠ, গ্রামের ঈদগাহ।

প্রতিপক্ষ বোমা-মাস্কেট হাতে দুষ্কৃতীর দল। পাড়ুইয়ের ভেড়ামারি গ্রামে তৎপর পুলিশ।

প্রতিপক্ষ বোমা-মাস্কেট হাতে দুষ্কৃতীর দল। পাড়ুইয়ের ভেড়ামারি গ্রামে তৎপর পুলিশ।

মহেন্দ্র জেনা ও বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

ঠিক যেন যুদ্ধক্ষেত্র!

ধানজমির মধ্যে পজিশন নিয়ে সার সার খাকি আর জংলা পোশাক। মেঠো আলের আড়ালে শুয়ে এসএলআর, ইনসাস এবং রিভলভারের নিশানা তাক্ করে পুলিশ। সঙ্গে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে, মুখে গামছা বাঁধা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদল। যাদের হাতে বোমা আর মাস্কেট। দু’পক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই। ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে সবুজ মাঠ, গ্রামের ঈদগাহ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই যুদ্ধের সাক্ষী রইল পাড়ুইয়ের ভেড়ামারি গ্রাম। বীরভূম জেলার সেই পাড়ুই, যা গত লোকসভা ভোটের পরে বিজেপি-র উত্থান-পরবর্তী সময় থেকেই বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে টানা তেতে রয়েছে। গত কয়েক মাসে পাড়ুইয়ের মাখড়া, চৌমণ্ডলপুর, ইমাদপুরের মতো একাধিক গ্রামে দফায় দফায় বিজেপি-তৃণমূল সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে। ভেড়ামারিও তার ব্যতিক্রম নয়। পার্থক্য একটাই। এ বার অন্তত পুলিশ হাত গুটিয়ে থাকেনি। রীতিমতো বন্দুক উঁচিয়ে ধানজমিতে নেমে শূন্যে গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করেছে দুষ্কৃতীবাহিনীকে। তবে, এ দিন ভেড়ামারি গ্রামে যে সংঘর্ষের সূত্রপাত, তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সালোন, পলসা-বেলুটি এলাকাতেও। দিনভর বোমা-গুলির লড়াইয়ে হতাহতের কোনও ঘটনাও ঘটেনি। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য পুলিশের গুলি চালানোর কথা মানেননি। তাঁর বক্তব্য, “দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতয়েন রয়েছে।” প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীরা কিন্তু জানিয়েছেন, এ দিন পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতীদের পিছু হটিয়ে দেয়।


তখন দুপুর। মোল্লাপাড়ার মাঠে শুরু হল মুড়িমুড়কির
মতো বোমা পড়া। দে ছুট গ্রামের কচিকাঁচার দল।

দিন কয়েক ধরেই পাড়ুই থানার একাধিক গ্রামে দলীয় পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া, গ্রাম ছাড়া কর্মী-সমর্থকদের গ্রামে ঢোকানো নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হয়েছে। বুধবার রাত থেকে পলসা-বেলুটি, সালন, ভেড়ামারি, বিষ্ণুখণ্ডা এলাকায় সেই নিয়ে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজিও হয়। বৃহস্পতিবার সেটাই বড় আকার নেয় ভেড়ামারিতে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ তৃণমূল আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী সাত্তোর পঞ্চায়েতের ভেড়ামারি গ্রামে ঢুকতে চেষ্টা করে। বোমা মারতে মারতে গ্রামে ঢোকার মুখে স্থানীয় বিজেপি সমর্থকেরা পাল্টা বোমা ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে বোমাবাজির লড়াইয়ে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। ভেড়ামারি গ্রামের উত্তর দিকে মোল্লামাঠে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে দু’দলের বোমা-গুলির লড়াই।


বিকেলের একটু আগে ভেড়ামারি গ্রাম থেকে র্যাফ-পুলিশের দল চলল ইদগাহ লাগোয়া মাঠের দিকে।

খবর পেয়ে এসপি-র নির্দেশে ডিএসপি পার্থ ঘোষ, বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ, সি আই চন্দ্রশেখর দাস এবং পাড়ুইয়ের পাঁচটি থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী, র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স যায়। ভেড়ামারির পাশে একটি ক্যানেলের দু’পাড়ে দুষ্কৃতী বাহিনীকে সরাতে গিয়ে শুরু পুলিশ-দুষ্কৃতীর গুলি বিনিময়। বিকেলে দুষ্কৃতীরা পিছু হটার পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ভেড়ামারিতে ঢুকে তল্লাশি অভিযানে নামে। যদিও কাউকে ধরা যায়নি। বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ পিকেট রয়েছে। বিজেপি নেতা নিমাই দাসের অভিযোগ, “তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফার নেতৃত্বে শেখ দুলাল, শেখ ফিরোজ-সহ বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ভেড়ামারি দখলের চেষ্টা করে। বাসিন্দারা প্রতিহত করেন।” বিজেপি-র বোলপুর মহকুমা সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “পাড়ুইয়ে আমাদের সংগঠন বাড়ছে দেখে আতঙ্কে তৃণমূল। তাই ভাড়াটে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রাম দখলের চেষ্টা করছে তারা।” অভিযোগ উড়িয়ে শেখ মুস্তফার দাবি, “নিমাই দাসের নেতৃত্বেই বিজেপি আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ভেড়ামারি দখলের চেষ্টা করেছে। বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি করে ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে। পুলিশ গেলে, পুলিশকে লক্ষ করেও বোমা এবং গুলি ছুড়েছে দুষ্কৃতীরা।”


ইদগাহ মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে দুষ্কৃতীর দল। হাতে মাস্কেট, বোমা।

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui mahendra jena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE