Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাসুল কমিয়ে শিল্প-গ্রাহক টানতে চায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা

তাদের বিদ্যুতের দাম বেশি বলে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে। তাই নতুন গ্রাহক তো পাচ্ছেই না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, উল্টে অনেক শিল্প-গ্রাহক তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:২৫
Share: Save:

তাদের বিদ্যুতের দাম বেশি বলে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে। তাই নতুন গ্রাহক তো পাচ্ছেই না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, উল্টে অনেক শিল্প-গ্রাহক তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে ওই অঞ্চলের শিল্প-গ্রাহকদের কাছে টানতে চান বণ্টন কর্তৃপক্ষ।

দুর্গাপুর-আসানসোল অঞ্চলে বণ্টন সংস্থার প্রধান প্রতিপক্ষ ডিভিসি। ওই অঞ্চলে ডিভিসি-র নিজস্ব ট্রান্সমিশন লাইন রয়েছে। আবার তাদের বিদ্যুতের দামও অনেকটা কম। ফলে ওই এলাকার বেশির ভাগ শিল্পসংস্থা তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে থাকে। ডিভিসি সূত্রে খবর, দুর্গাপুর-আসানসোল অঞ্চলে তারা শিল্প-গ্রাহকদের ইউনিট পিছু গড়ে ৪ টাকা ১৮ পয়সা দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। মূলত স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো আয়রন, সিমেন্ট এবং টিএমটি বার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ডিভিসি-র কাছে এই দরে বিদ্যুৎ কেনে। প্রায় ১২৫টি শিল্প-গ্রাহক রয়েছে ডিভিসি-র অধীনে।

কিন্তু পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও দুর্গাপুর-আসানসোল অঞ্চলে বণ্টন সংস্থা তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারছে না। শিল্প মহলের অভিযোগ, ডিভিসি-র তুলনায় বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ মাসুল প্রায় দ্বিগুণ। এই কারণেই শিল্প সংস্থাগুলি তাদের থেকে বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী হয় না। বণ্টন সংস্থার কর্তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই তাঁরা মাসুল কমিয়ে আসানসোল অঞ্চলে ইস্টার্ন কোলফিল্ডসকে বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছেন। ইস্টার্ন কোলফিল্ডস-এর বেশ কয়েকটি খনি আগে দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনত, এখন নেয় বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে। ওই কর্তাদের দাবি, মাসুল কমিয়ে তাঁরা ডিভিসি-কে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলতে পারবেন।

বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে এখন যেখানে ব্যবসা প্রায় হয়ই না, সেখানে মাসুল কমিয়ে যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো যায় তা হলে আমাদের লাভ। সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে।’’

দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বাইরেও কল-কারখানার জন্য বিদ্যুৎ মাসুল কমানোর কথা ভাবছে না কেন বণ্টন সংস্থা? বণ্টন সংস্থার কর্তাদের দাবি, বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের আইন অনুযায়ী যেখানে এক বা একাধিক পরিষেবা দানকারী সংস্থা রয়েছে, সেখানে ব্যবসা বাড়াতে মাসুল কমানো যেতে পারে। কিন্তু অন্যত্র তা সম্ভব নয়।

বণ্টন সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রতিযোগিতামূলক মাসুল নীতিতে না গেলে ওই অঞ্চলের নতুন বা পুরনো শিল্প-গ্রাহকদের আমরা ধরতে পারব না।’’ মাসুল কমালে বর্তমানদের যেমন ধরে রাখা যাবে, পাশাপাশি নতুন গ্রাহকও পাওয়া যাবে। তাতে ওই অঞ্চলে ব্যবসা বাড়বে। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর-আসানসোল অঞ্চলে নিজেদের পৃথক ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ডিভিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। সংস্থা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দুর্গাপুর-আসানসোল অঞ্চলে ও বাঁকুড়া এবং হাওড়ার কিছু অংশে তাদের যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামো রয়েছে তা বেশ শক্তিশালী। ওই সমস্ত অঞ্চলে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কোনও ট্রান্সমিশন লাইন নেই। ফলে তাদের অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে গেলেও তাদের সংবহন পরিকাঠামোর উপরেই বণ্টন সংস্থাকে ভরসা করতে হবে। আর তা যদি করতে হয়, তখন তাদের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহারের জন্য ভাড়া দিতে হবে। ডিভিসি-র কর্তাদের একাংশের বিশ্বাস, বণ্টন সংস্থার পক্ষে বিদ্যুৎ মাসুল খুব বেশি কমানো সম্ভব নয়, কারণ তাদের খরচ বেশি।

এখন বছরের বিভিন্ন সময়ে বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকে। বিশেষ করে শীত ও বর্ষায় রাজ্যের চাহিদা মিটিয়েও বাড়তি বিদ্যুৎ থেকে যায়। সম্প্রতি সিইএসসি-ও বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে নতুন বাজার ধরা বণ্টন কর্তাদের জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ শিল্পমহলের বক্তব্য, উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ অন্য কোথাও বিক্রি করে যে মোটা টাকা মিলবে এমন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, জাতীয় গ্রিডে এমনিতেই বিদ্যুতের দাম বেশ কমে গিয়েছে। ফলে ঘরের বাজারে গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়ে ব্যবসা বাড়ানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত বণ্টন কর্তৃপক্ষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE