Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধ নয়, আর মৃত্যু চান না শহিদের বাবা

নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন সদ্য। চোখের জল এখনও শুকোয়নি। তার মধ্যে আর কোনও বাপ-মায়ের কোল খালি হোক, সেটা কোনও মতেই চান না ওঙ্কারনাথ দলুই।

ক্ষত এখনও টাটকা । শহিদ জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের বাবা ওঙ্কারনাথ দলুই (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। —ফাইল চিত্র

ক্ষত এখনও টাটকা । শহিদ জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের বাবা ওঙ্কারনাথ দলুই (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। —ফাইল চিত্র

নুরুল আবসার ও শান্তশ্রী মজুমদার
উলুবেড়িয়া ও সাগর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন সদ্য। চোখের জল এখনও শুকোয়নি। তার মধ্যে আর কোনও বাপ-মায়ের কোল খালি হোক, সেটা কোনও মতেই চান না ওঙ্কারনাথ দলুই।

ওঙ্কারনাথ উরি হামলায় নিহত জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের বাবা।

১৮ সেপ্টেম্বর উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় যে ১৮ জন জওয়ান প্রাণ হারান, তার মধ্যে ছিলেন হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা গঙ্গাধর। তার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখার দু’পারে উত্তেজনা বাড়ছিল। দেশের মধ্যেও চাপ তৈরি হচ্ছিল পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য। শেষমেশ বুধবার মাঝরাতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছে ভারত। নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড। সে খবর শুনে কিন্তু উল্লসিত নন ওঙ্কারবাবু। খালি বলছেন, ‘‘আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। যুদ্ধ নয়, কূটনৈতিক ভাবেই সমস্যার সমাধান হোক।’’

দিনমজুরি করে কষ্টে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন ওঙ্কারনাথ। দেনাও হয়েছিল বিস্তর। বছর বাইশের ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল পরিবার। সেই ছেলেকেই হারিয়েছেন ওঙ্কারনাথ। রাজ্য যে় দু’লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে, তা-ও নিতে অস্বীকার করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘চোলাই খেয়ে মরলেও দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, জওয়ানের মৃত্যুতেও তাই?’’

সেই ওঙ্কারনাথই কিন্তু একেবারেই চাইছেন না, প্রতিহিংসার পথে জবাব দিক তাঁর দেশ। কেন? বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ শুরু হলে নির্বিচারে নিরীহ মানুষ মারতে পাকিস্তানের বুক কাঁপবে না। আমি আর কারও মৃত্যু চাই না।’’ চোখের জল সামলে শহিদের বাবার একটাই কথা, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সব দিক দিয়ে চেষ্টা করতে হবে, কূটনৈতিক ভাবেই যেন সমস্যার সমাধান করা হয়।’’ওঙ্কারনাথের মতো করে ভাবছে না দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহিদ বিশ্বজিৎ ঘোড়ইয়ের পরিবার। সাগরের সূর্যবৃন্দা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎও উরিতে জঙ্গি হামলার শিকার। তাঁর বাবা রবীন্দ্রনাথবাবু এ দিন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর খবর টিভিতে দেখেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আজ একটা দিন অন্তত শান্তিতে ঘুমোতে পারব।’’

ছোট থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বিশ্বজিৎ। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পর দিনমজুর পরিবারটি আশায় বুক বেঁধেছিল। ছেলের জন্য পাত্রীর খোঁজ চলছিল। কিন্তু হঠাৎই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে সব। সেই শোক বুকে নিয়েও রবীন্দ্রনাথবাবু তখন বলেছিলেন, ‘‘এক ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সুযোগ থাকলে আর এক ছেলেকেও সেনাবাহিনীতে পাঠাব।’’

বিশ্বজিতের সেই ভাই রণজিৎ বলেন, ‘‘বারবার পাক জঙ্গিরা ঢুকে আমাদের জওয়ানদের মেরে যাবে? এই বার ঠিক হয়েছে। মনের জোর পাচ্ছি।’’

চোখের জলের রঙ এক। তবু দুই শহিদ পরিবারের আবেগ এখন বইছে দুই খাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uri Martyr's father Peace
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE