Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যে পথে আলাপন, রাজ্যের সেই আইন কি আদতে সোনার পাথরবাটি?

অন্তর্বর্তীকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বুধবারই দায়িত্ব নিচ্ছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তাঁর এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকারি অফিসার তথা পরিববহণসচিব আলাপনবাবু কী ভাবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকতে পারেন?

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ১১:১৭
Share: Save:

অন্তর্বর্তীকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বুধবারই দায়িত্ব নিচ্ছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তাঁর এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকারি অফিসার তথা পরিববহণসচিব আলাপনবাবু কী ভাবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকতে পারেন?

নবান্ন যদিও ১৯৯৪ সালের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনের ৩ নম্বর ধারার ২ উপধারার উল্লেখ করে তা খণ্ডাতে চাইছে। ওই ধারা অনুযায়ী, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কোনও কারণে তাঁর দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে বা পদত্যাগ করলে বা মারা গেলে রাজ্য সরকারের কোনও অফিসারকে ওই পদে বসানো যেতে পারে। স্থায়ী কমিশনার ফের কর্মক্ষম না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনিই ওই পদে থাকবেন। যে হেতু সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের পদত্যাগপত্র রাজ্যপাল গ্রহণ করেছেন তাই এ ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করে আলাপনবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া যায় বলে রাজ্যের যুক্তি।

আর ঠিক এই জায়গাতেই প্রশ্নটা উঠছে। কারণ নির্বাচন কমিশনারের পদে থাকাকালীন ওই অফিসার রাজ্য সরকারি পদের দায়িত্বও সামলাতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে আইনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনটা করা যায় না। যেমন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই নিয়োগ অবৈধ। কারণ, নির্বাচন কমিশন একটি স্বশাসিত, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা কোনও অফিসার নিরপেক্ষ ভাবে এই পদের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’’

নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলাপনবাবু রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তলব করতে পারবেন। কিন্তু পরিবহণসচিব হিসেবে তো তিনি মুখ্যসচিবের অধীনে থাকা কর্মচারী। এবং সেটাই তাঁর স্থায়ী পদ। কাজেই তিনি কি মুখ্যসচিবের অপছন্দের কাজ করবেন? কেন না, স্থায়ী কমিশনার ফের কর্মক্ষম হওয়ার পর বা নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পর আলাপনবাবুকে ফের রাজ্য সরকারের অধীনেই কাজ করতে হবে। তাঁর সার্ভিস বুখ থেকে সব কিছুই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কাজেই রাজ্যের অপছন্দের কাজ তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়।

একই কথা বলছেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশনার পদে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই ব্যক্তির ভূমিকা কী হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। সরকারি চাকরিতে ফের তিনি ফিরে আসবেন? তবে তো তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।’’ তাঁর মতে, এটা সাংবিধানিক প্রশ্ন।

আর এই ব্যাখ্যা থেকে আরও প্রশ্ন উঠে আসছে। তবে কি আলাপনবাবু দু’টি পদেই বহাল থাকবেন? নাকি তিনি পরিবহণসচিব পদ থেকে ইস্তফা দেবেন? নাকি তিনি কমিশনারের পদটি গ্রহণ করবেন না? আইনজ্ঞদের মতে, অস্থায়ী কমিশনারের ধারণাটাই সোনার পাথরবাটি। কারণ, তাঁকে যদি ফের রাজ্য সরকারি পদেই ফিরে যেতে হয়, তা হলে কমিশনার পদে তাঁর ভূমিকার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

এই সংক্রান্ত খবর: আলাপনকে বিকল্প করে বিতর্কে রাজ্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE