Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর সঙ্গে ব্যবহারের পাঠ চাই ডাক্তারদের

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনা রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবনতির দিকে আঙুল তুলছে। শহর হোক বা মফস্‌সল, হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা নাকাল তো হচ্ছেনই। অনেক ক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সামাজিক দায়দায়িত্বের ব্যাপারে চিকিৎসকদের নতুন করে ভাবনাচিন্তার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন অধিকাংশ বক্তা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৩৫
Share: Save:

কাজটা যখন ডাক্তারি, শারীরবিজ্ঞান আর রসায়ন-প্রযুক্তি নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চর্চা তো চাই-ই চাই। সেই সঙ্গে দরকার চিকিৎসকের পেশার সামাজিক দায়দায়িত্ব এবং পেশার নৈতিকতা নিয়ে নিরন্তর অনুশীলনও।

মেডিকো-লিগ্যাল বিষয়ে রবিবার একটি আলোচনাচক্রে চিকিৎসা পেশা সম্পর্কে উঠে এল এই মতামত। চিকিৎসকদের সংগঠন ‘স্পাইনাল কড সোসাইটি ওয়েস্টবেঙ্গল’ আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় চিকিৎসকদের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু আইনজ্ঞ এবং প্রাক্তন বিচারপতি।

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনা রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবনতির দিকে আঙুল তুলছে। শহর হোক বা মফস্‌সল, হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা নাকাল তো হচ্ছেনই। অনেক ক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সামাজিক দায়দায়িত্বের ব্যাপারে চিকিৎসকদের নতুন করে ভাবনাচিন্তার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন অধিকাংশ বক্তা।

এ দিনের সভায় বিভিন্ন আলোচক জানান, চিকিৎসকের পেশাটাই এমন যে, নিত্যদিন বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে সম্মুখীন হতে হয় এবং সেই সূত্রেই বিচিত্র পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়াটা প্রায় অবধারিত। এই বিষয়ে চিকিৎসকেরা ছাত্রাবস্থা থেকে অবগত থাকলে যে-কোনও পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। রোগীকে তাঁর অসুখের কথা কী ভাবে জানাতে হবে, রোগীর পরিজনদের কী বলবেন, বিশেষত কোনও অস্ত্রোপচার এবং তার ঝুঁকি সম্পর্কে রোগীর পরিবারকে কতটা মোলায়েম সুরে অবহিত করানো যাবে— এই সমস্ত বিষয়েই প্রশিক্ষণ দরকার।

রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে আন্তরিক যোগাযোগের অভাবটাই পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতির মূল কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের মতে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে কোথাও একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। রোগীর চিকিৎসা করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর পরিজনদের মানসিক পরিস্থিতি ঠিক কী ভাবে, কতটা সহমর্মিতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা দরকার, সেটাও শিখতে হবে চিকিৎসকদের। লোকব্যবহার যেমন শিক্ষণীয়, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে রোগী-ব্যবহারও তা-ই। আয়োজক সংগঠনের সম্পাদক চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক বলেন, ‘‘চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পেশা সম্পর্কেও পড়ুয়াদের জানানো জরুরি। এই পেশার সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক কতটা, সেটা উপলব্ধি করতে না-পারলে সমস্যা বা়ড়বে। শুধু রোগীর আত্মীয়পরিজনের দিকে আঙুল তুললেই পরিস্থিতি বদলে যাবে না। নিজেদের কাজ এবং নিজেদের দায়বদ্ধতা নিয়েও চিকিৎসকদের নিয়মিত আলোচনা করা জরুরি।’’

রাজ্য সরকারের নতুন ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলছে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য-চিকিৎসক রাজেন পাণ্ডে এ দিনের সভায় জানান, চিকিৎসকেরা তাঁদের পেশাগত দায়বদ্ধতার শর্ত নিষ্ঠাভরে পালন করলে কোনও আইনই কর্মক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। চিকিৎসকদের প্রতি তাঁর আশ্বাস, গাফিলতির কোনও অভিযোগ উঠলে কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী সবটা খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের যেমন সম্মানের সঙ্গে কাজ করার অধিকার আছে, একই ভাবে যে-কোনও নাগরিকের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার আছে। তাই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তদন্তে সব দিক থেকে সহযোগিতা করাই উচিত। ‘‘যে-কোনও পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরিবর্তে কী ভাবে পরিস্থিতিকে সহজ করা যায়, সেই চেষ্টা করাই ভাল,’’ বলেন পাণ্ডে।

রাজেনবাবুর সঙ্গে সহমত প্রাক্তন বিচারপতি চামেলি মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, দেশের আইন ব্যবস্থার উপরে সকলের ভরসা থাকা জরুরি। প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। তাই যে-কোনও নাগরিক অভিযোগ করতেই পারেন। ‘‘তবে অভিযোগ করা আর দোষ প্রমাণের মধ্যে পার্থক্য আছে,’’ বলেন চামেলিদেবী।

রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক যে-দিকে যাচ্ছে, সেটা খুব চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন প্রাক্তন বিচারপতি প্রতাপকুমার রায়। ‘‘চিকিৎসকদের উপরে ভরসা রাখতে হবে। কারণ, কোনও চিকিৎসকই ইচ্ছাকৃত ভাবে রোগীকে মেরে ফেলেন না। চিকিৎসকদের উপরে ভরসা নষ্ট হয়ে গেলে সামাজিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে,’’ বলেন প্রতাপবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Patients ডাক্তার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE