Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সারদা মামলা

রাজ্য ৫০০ কোটি দিল কী করে, প্রশ্ন কোর্টের

রাজ্য সরকার মাঝেমধ্যেই হাহুতাশ করে, কোষাগারে টাকা নেই। এই অবস্থায় সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা কোথা থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

রাজ্য সরকার মাঝেমধ্যেই হাহুতাশ করে, কোষাগারে টাকা নেই। এই অবস্থায় সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা কোথা থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেনকে নিয়ে গড়া কমিশনের মাধ্যমে সেই টাকার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। তবে সকলে টাকা পাননি।

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার ওই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হয়নি। একই সঙ্গে জানতে চেয়েছে, ওই টাকা অন্যান্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার আমানতকারীদের মধ্যে বিলি না-করে শুধু সারদার ক্ষতিগ্রস্তদেরই দেওয়া হল কেন? ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, সারদা কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এবং সব নথি শুক্রবারের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে।

এ দিন সারদা কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া একটি মামলার শুনানি ছিল। ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলাতেই রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার)-র উদ্দেশে বলে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের অন্তর্বর্তিকালীন যে-রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে দু’বছর আগের রাজ্য বাজেটের একটি নথিও রয়েছে। সেই নথি অনুযায়ী ঘাটতি রয়েছে রাজ্যের বাজেটে। বাজেটেই যেখানে এত ঘাটতি, টানাটানির সেই পরিস্থিতিতে সারদার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা কোথা থেকে বরাদ্দ হল?

জিপি জানান, পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাত থেকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে।

জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সেই সময় আদালতে জানান, সারদা গোষ্ঠী ছাড়া আরও ৭৩টি অর্থ লগ্নি সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। সেই সব সংস্থাতেও টাকা লগ্নি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। তা সত্ত্বেও শুধু সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদেরই মধ্যেই রাজ্য সরকারের বরাদ্দ টাকা বিলি করা হয়েছে কেন? বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চও।

বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ দিন জিপি-কে বলেন, সারদার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শ্যামল সেন কমিশন কী মাপকাঠি ঠিক করেছিল, আদালত তা জানতে চায়।

শ্যামল সেন কমিশন গড়ে রাজ্য সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও ওই কমিশন পুরো টাকা আমানতকারীদের মধ্যে বিলি করেনি। কমিশন ক’জন আমানতকারীকে কী ভাবে কত টাকা দিয়েছে, বাকি টাকা কোথায় ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছেন সুবীর দে নামে এক ব্যক্তি। এর আগের শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ জিপি-কে নির্দেশ দিয়েছিল, কমিশনের সব নথি ৫ অক্টোবর পেশ করতে হবে। কিন্তু জিপি এ দিন সেই সব নথি আদালতে পেশ করতে পারেননি। জিপি এ দিন আদালতে জানান, কমিশন ২৯ হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীকে টাকা দিয়েছে।

জনস্বার্থ মামলার অন্য আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, কমিশন তাদের কাজ শেষ করে গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাজ্য সরকারের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করেছিল। সেই রিপোর্ট এবং কমিশনের সব নথি আগামী শুক্রবার আদালতে পেশ করার জন্য জিপি-কে এ দিন নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

court fund saradha chit fund money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE