তৃষ্ণার বারি। শুক্রবার পার্ক সার্কাসে স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
যা ভয় ছিল, তা-ই হল। তাপপ্রবাহ থাবা বসাল রাঢ়ভূমিতে। কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ আপাতত ‘লু’ থেকে রেহাই পেলেও ঘেমে-নেয়ে তার আগের মতোই একশা দশা।
বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে থাকা নিম্নচাপ-অক্ষরেখা একটু দুর্বল হতেই বিহার-ঝাড়খণ্ড সীমানায় অপেক্ষারত মধ্য ভারতের গরম হাওয়া শুক্রবার হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছে রাঢ়বঙ্গে। তাতে ওই তল্লাট জুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ধাক্কায় দু’-তিন ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। পরিণামে পুরুলিয়া, বীরভূম গ্রাস করে তাপপ্রবাহ এখন বর্ধমান-বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের দরজায় কড়া নাড়ছে। লাগামছাড়া উষ্ণতাবৃদ্ধির সুবাদে মুর্শিদাবাদও তাপপ্রবাহের ‘ওয়েটিং লিস্টে।’
তাপপ্রবাহ জিনিসটা কী?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মে কোনও অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বছরের সেই সময়ে সেখানকার স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুকনো গরম বাতাস, অর্থাৎ লু বইতে থাকে। লু’র তেজে পশ্চিমাঞ্চল ভাজা-ভাজা হলেও কলকাতা ও আশপাশের মানুষ প্রবল আর্দ্রতাজনিত ঘেমো গরমেই অস্থির। কারণ, কলকাতার উপরে নিম্নচাপ-অক্ষরেখা এ দিনও হাত-পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।
তাই মহানগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর না-বাড়লেও, বৃহস্পতিবারের মতো অস্বস্তি শুক্রবার দিনভর বহাল ছিল। লোকে কুলকুলিয়ে ঘেমেছে, কিন্তু সেই ঘাম শুকোতে পারেনি।
গায়ে সেঁটে থেকে শরীরকে অবসন্ন করে তুলেছে। রাস্তায় বেরোলে কারও চোখ জ্বলেছে, কারও মাথা ঘুরিয়েছে, কারও পেট মুচড়েছে। অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে তিন জনের মৃত্যুর খবর এসেছে কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলো থেকে।
সব মিলিয়ে শহর-শহরতলিতে রীতিমতো ত্রাহি রব। নানা লোকাল ট্রেনে নিত্যযাত্রীরা এ দিন নিজেদের মধ্যে নুন-চিনির জল বিলিয়েছেন। লেবুর জল-সরবত-লস্যির দোকানে উপচানো ভিড়। চিকিৎসকেরা অবশ্য রাস্তার ধারের দোকান থেকে সরবত কিনে খেতে নিষেধ করছেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি: এই সময়টায় পেটের রোগ হলে শরীর থেকে অত্যধিক জল বেরিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হার্ট-কিডনি-লিভারে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। অবস্থা দ্রুত আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
তাই এই সময়টায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলছেন ডাক্তারেরা। পরামর্শ দিচ্ছেন ঘন ঘন নুন-চিনির জল খাওয়ার। কারণ, শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য ঠিক থাকলে শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজকর্মও স্বাভাবিক থাকে। এমন অসহনীয় আবহাওয়া চলবে ক’দিন?
আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিনও বিশেষ আশার বাণী শোনাতে পারেননি। ‘‘মে মাসের মধ্যে অবস্থা বদলানোর আশা তো দেখছি না।’’— মন্তব্য তাঁর। অধিকর্তা জানাচ্ছেন, নিম্নচাপ-অক্ষরেখার সুবাদে মাঝে-মধ্যে পরিমণ্ডলে মেঘ ঢুকছে, একটু-আধটু হাওয়া বইছে। হয়তো কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হবে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে না। বৃষ্টির পরে ফের অস্বস্তিকর পরিবেশ চেপে বসবে।
জ্বালা জুড়োতে। শুক্রবার কলকাতায় প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
বস্তুত কলকাতায় এ দিন তাপমাত্রা ও বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার বহর ছিল বৃহস্পতিবারের মতোই, ফলে অস্বস্তির মাত্রাও এক রয়ে গিয়েছে। এ দিন বেলা আড়াইটেয় মহানগরে অস্বস্তিসূচক সেই সাড়ে ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই উঠে যায়।
আলিপুরের পূর্বাভাস: আজ, শনিবার বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমান তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে। আর নিম্নচাপ-অক্ষরেখা দুর্বল হলে কলকাতা ও আশপাশের তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy