Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেয়াত নয় তৃণমূলকে, অমিত-হুঙ্কার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নরম হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি করলেন অমিত শাহ। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আগামী ১২ অগস্ট কলকাতায় যাচ্ছেন। ঘটনাচক্রে ওই একই দিনে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা আছে মমতার।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নরম হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি করলেন অমিত শাহ। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আগামী ১২ অগস্ট কলকাতায় যাচ্ছেন। ঘটনাচক্রে ওই একই দিনে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা আছে মমতার। মমতা দিল্লি আসছেন ১১ তারিখ। সুতরাং বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এই রকম যে, মমতা যখন দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন, ঠিক তখনই কলকাতায় তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবেন অমিত।

মোদী ক্ষমতায় আসার পরে দীর্ঘ দশ মাস তাঁকে এড়িয়ে গেলেও মার্চ মাসে তাঁর সঙ্গে প্রথম বার দেখা করেছিলেন মমতা। বিজেপি-তৃণমূলের পারস্পরিক আক্রমণের ঝাঁঝ তার পর থেকে অনেকটা কমে গিয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। রবিবার কিন্তু আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হতেই পারে। একবার কেন একশো বার বৈঠক করুন। কিন্তু তাই বলে যারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মমতা সম্পর্কে কৌশল বদলে ফেলেছে আর নরম হয়ে গিয়েছে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’’

এর আগে জুলাই মাসেই পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন অমিত। সে বার হাওড়ায় একটি কর্মিসভা করেছিলেন তিনি। সেই সভায় অমিত বলেছিলেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক জন বিজেপি সাংসদ দেখতে চান তিনি। অমিতের এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে প্রচুর জল্পনা শুরু হয়ে যায়। এমনকী রাজ্য বিজেপির ভিতরেও একাংশের কাছে মনে হতে থাকে, তবে কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মেনেই নিচ্ছেন যে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে মমতাকে হারানো যাবে না? তা ছাড়া ওই সভায় অমিতের তরফে মমতা-বিরোধী সুরও যথেষ্ট কড়া ছিল না বলে অভিযোগ করেছিলেন কেউ কেউ।

মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠক, সংসদে বিভিন্ন বিল পেশের ক্ষেত্রে তৃণমূলের হয় সমর্থন (যেমন স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল) নয় সক্রিয় বিরোধিতা না-করার নীতি (যেমন পণ্য-পরিষেবা কর বিল), সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের ধরপাকড় স্তিমিত হয়ে আসা— এই সব কিছু মিলিয়েই বিজেপি-তৃণমূলের দূরত্ব কমছে বলে দাবি করে আসছিলেন বিরোধীরা। এই আবহে জুলাই মাসের সভায় অমিতের ২০১৯ সংক্রান্ত বক্তব্য আরও বেশি করে জল্পনা উস্কে দেয়। কিন্তু এ দিন অমিত স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘‘যারা মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে বিজেপি নরম মনোভাব নিচ্ছে তারা মস্ত বড় ভুল করছেন।’’ শুধু তাই নয়, ১২ তারিখ কলকাতায় গিয়ে তিনি যে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আক্রমণেই যাবেন, সে কথাও এখন থেকেই বলে রাখলেন তিনি। যেমন বললেন, ‘‘তৃণমূলের অপদার্থতা এবং দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গকে কী ভাবে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিটি দিক আমরা রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরব। যে ভাবে তৃণমূল ভোটের জন্য সংখ্যালঘু তোষণ করে আমরা তার বিরোধিতা করব।’’ বললেন, ‘‘বন্যা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। কিন্তু যে ভাবে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় মমতা সরকার ব্যর্থ হচ্ছে, সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরা আমাদের কর্তব্য।’’

সারদা তদন্তে সিবিআইকে ধীরে চলার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র, এমন অভিযোগও এ দিন উড়িয়ে দিয়েছেন অমিত। সিবিআই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই-কে প্রভাবিত করা আমাদের কাজ নয়। সিবিআই সিবিআইয়ের কাজ করবে। কিন্তু সিবিআই-এর তদন্তে যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তবে তার বিরুদ্ধে সরব হওয়া আমাদের কর্তব্য। আমরা সেটাই করব।’’ এবং এই সব কথা বলবেন বলে অমিত যে মমতার দিল্লি আসার সময়টাকেই বেছে নিচ্ছেন, তার পিছনেও কি কোনও পরিকল্পিত কৌশল রয়েছে? রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মনে প্রশ্নটা কিন্তু উঁকি দিচ্ছে।

এ বছরের শেষে বিহার ভোট। নীতীশ-লালু জুটিকে পরাস্ত করা এই মুহূর্তে বিজেপি সভাপতি হিসেবে এক বছর পূর্ণ করা অমিত শাহের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারেও তিনি খুবই ‘সিরিয়াস’। সভাপতি হওয়ার পর অমিত গত এক বছরে ভারতের প্রতিটি রাজ্যে অন্তত দু’বার করে সফর করেছেন। এ বার থেকে পশ্চিমবঙ্গে আরও ঘনঘন সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

তাঁর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য যেখানে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের মজবুত সংগঠন আছে। এটা খুবই আশার কথা যে ওখানে বিজেপি এবং আরএসএস হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।’’ এই মেলবন্ধন আরও জোরদার করার লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গে দলের প্রধান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের আরএসএস-ঘনিষ্ঠ নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে আছেন সিদ্ধার্থনারায়ণ সিংহ। অমিতের কথায়, ‘‘কৈলাসজির মত এক জন প্রবীণ নেতাকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়ার অর্থই হল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে গুরুত্ব দিচ্ছে।’’

অমিত কলকাতায় যাওয়ার আগেই, ৮ অগস্ট কলকাতা যাচ্ছেন কৈলাস। রাজ্যের সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। এর আগে নির্মলা সীতারমনকেও পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জেলাওয়াড়ি সফর করে অমিতের কাছে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। অমিত নিজেও গিয়ে রাজ্যনেতাদের সঙ্গে বসে বিধানসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করবেন। তা ছাড়া রাজ্য সভাপতি পদে রাহুল সিংহের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। বিজেপি সূত্র বলছে, রাজ্যে দলীয় অন্তর্কলহের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভোটের আগে নতুন সভাপতি মনোনীত করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। রাহুলের বদলে কে সভাপতি হবেন, সেই নামটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অমিত এ বার গিয়ে এই বিষয়েও আলোচনা করতে পারেন। পাশাপাশি একটি বণিকসভায় বক্তৃতা করা এবং একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা আছে তাঁর। তার প্রাক্কালে অমিত দিল্লি থেকেই ঘোষণা করে দিলেন, ‘‘বিজেপিই পারবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করতে। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ়সংকল্প। আমাদের কোনও পিছুটান নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE