Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষোভে মঞ্চ ছাড়লেন তৃণমূল কাউন্সিলর

শপথেও দ্বন্দ্ব দেখল সোনামুখী

শপথগ্রহণের দিনও দ্বন্দ্ব এড়াতে পারল না শাসকদল! সৌজন্যে সেই সোনামুখী! তবে, এ বার দ্বন্দ্ব সোনামুখীর পুরপ্রধানের পদ নিয়ে নয়। কারণ, তা ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং! কিন্তু, দ্বন্দ্ব বাধল উপ-পুরপ্রধান নিয়ে। রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় উপ-পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করতেই প্রতিবাদে অনুষ্ঠান মঞ্চ ছেড়েই চলে গেলেন তৃণমূলের এক জয়ী কাউন্সিলর।

ঐক্য দেখানোর মরিয়া চেষ্টায় চোনা ফেলল সেই দ্বন্দ্ব! পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় ও বিধায়ক দীপালি সাহা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ঐক্য দেখানোর মরিয়া চেষ্টায় চোনা ফেলল সেই দ্বন্দ্ব! পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় ও বিধায়ক দীপালি সাহা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

শপথগ্রহণের দিনও দ্বন্দ্ব এড়াতে পারল না শাসকদল! সৌজন্যে সেই সোনামুখী!

তবে, এ বার দ্বন্দ্ব সোনামুখীর পুরপ্রধানের পদ নিয়ে নয়। কারণ, তা ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং! কিন্তু, দ্বন্দ্ব বাধল উপ-পুরপ্রধান নিয়ে। রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় উপ-পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করতেই প্রতিবাদে অনুষ্ঠান মঞ্চ ছেড়েই চলে গেলেন তৃণমূলের এক জয়ী কাউন্সিলর। মঞ্চে তখন হাজির বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ খাঁ। সব মিলিয়ে শপথের দিনও দ্বন্দ্ব-কাঁটা ভালই বিঁধল তৃণমূল নেতৃত্বকে। সোমবারই বিষ্ণুপুরে শ্যামাপ্রসাদবাবুদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে উল্টো ছবি। সেখানে উপস্থিত দর্শকদের মাথার উপরে ফুল ছড়িয়েছিল ড্রোন! আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিষ্ণুপুরের পাশের পুর-শহর অস্বস্তি ফিরিয়ে দিল শাসক-শিবিরকে।

এক দশক পরে এ বার সোনামুখী পুরসভার ক্ষমতা বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। অথচ, স্থানীয় বিধায়ক দীপালি সাহা এবং তৃণমূল নেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর বিবাদে এই পুরসভায় ক্ষমতায় আসা নিয়ে একটা সময়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল জেলা তৃণমূলে। বিবাদ মেটাতে হস্তক্ষেপ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় রাজ্যের জয়ী কাউন্সিলরদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে সোনামুখীর পুরপ্রধান হিসেবে সুরজিৎবাবুর নাম ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী। ফলে, তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত দীপালি সাহা ও তাঁর অনুগামীরা সুরজিৎবাবুর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলার সাহস পাননি।

কিন্তু, উপ-পুরপ্রধানের নাম নিয়ে দীপালি-শিবিরের মধ্যেই শুরু হয় ঝামেলা। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই পদে দাবিদারের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলায় নিজেরা বসেও উপ-পুরপ্রধানের নাম ঠিক করতে পারেননি দীপালিদেবীরা। ফলে, বল চলে যায় দলের বাঁকুড়া জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর কোর্টে। তিনি দিন কয়েক আগে বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজে সোনামুখী পুরসভায় দলের জয়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসেও সহমতে আসতে পারেননি। শুভেন্দুবাবু জানিয়ে দিয়ে যান, শপথ গ্রহণের দিন উপ-পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করবেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা সদ্য শপথ নেওয়া পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদবাবু এবং দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ।

মঙ্গলবার সোনামুখী পুরসভার সভাকক্ষে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত শপথ নেওয়ান তৃণমূলের ৯ জন এবং বামফ্রন্টের ৬ জন কাউন্সিলরকে। পরে পুরপ্রধান হিসেবে মহকুমাশাসকের সামনে শপথ নেন সুরজিৎবাবু। এর পরেই দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে পুর-ভবনের সামনে বাঁধা মঞ্চে নেমে আসেন তিনি। বাজি ফাটিয়ে, বাজনা বাজিয়ে বরণ করা হয় তাঁদের। ঐক্যের বার্তা দিতে অনুষ্ঠান মঞ্চে এক সঙ্গে হাসছেন সুরজিৎ-দীপালিক। মঞ্চে বসে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুধাংশু তিওয়ারি, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, বস্ত্রমন্ত্রী, জেলা সভাপতি, শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি, বড়জোড়ার বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমূখ। দর্শকাসনও ভর্তি।

এই অবধি সব ঠিকই ছিল। এর পরে অনুষ্ঠান মঞ্চেই শ্যামবাবু ঘোষণা করেন, উপ-পুরপ্রধান হচ্ছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী অমরনাথ সু। আর তাতেই বাধে বিপত্তি!

এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধিতা করে মঞ্চ ছাড়েন ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলর তপনজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। তপনবাবু বাইরে বেরিয়ে এসে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “কোনও আলোচনা না করে, আমাদের মতামত না নিয়েই এক তরফা ভাবে উপ-পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। দলের বিরুদ্ধে আমার কোনও ক্ষোভ নেই। এ ব্যাপারে কলকাঠি নেড়েছেন দীপালি সাহা! দলকেই চিঠি লিখে সব জানাবো।’’ এক ধাপ এগিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দরকারে আবার নির্বাচন হোক! এলাকার মানুষ যে আমার সঙ্গে আছেন, তা প্রমাণিত হবে।’’ অনেকেই তাঁর পাশে আছেন বলেও দাবি এই কাউন্সিলরের।

প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটলেও উপ-পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে কিছু দলীয় কাউন্সিলরের অসন্তোষের কথা মানতে চাননি জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ। তিনি বলেন, “অসন্তোষের কথা আমাকে কেউ জানাননি। কেউ মঞ্চ ছেড়ে রাগে বেরিয়ে গেছেন বলেও আমার জানা নেই।’’ এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন দীপালিদেবী এবং সদ্য পুরপ্রধান পদে শপথ নেওয়া সুরজিৎবাবুও। যদিও ঘটনাটিকে নিয়ে টিপ্পনী কেটেছেন এই পুরবোর্ডের বিরোধী নেতা, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর তপন দত্ত। তাঁর মন্তব্য, “শুরুতেই যদি এই অবস্থা হয়, পরে কী হবে জানি না। তবে পুরসভার ভাল উদ্যোগগুলির পিছনে আমরা নিশ্চয় থাকব।”

দলীয় কাউন্সিলরের অসন্তোষ প্রসঙ্গে কিছু না বললেও তঁর আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন সুরজিৎবাবু। তাঁর কথায়, “এত দিন আমরা বিরোধী হিসেবে এটা চাই, ওটা চাই বলে এসেছি। এ বার আমাদেরই সেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এগোতে হবে। দলনেত্রী আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে শহরের উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’’ এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE