Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষককে চড় মেরে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা

দলের এক ব্লক সভাপতি অস্ত্র-সহ বিমানবন্দরে ধরা পড়ে জেল-হাজতে রয়েছেন। এক সপ্তাহ পেরোলেও দলীয় ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল।

চড় খাওয়ার কথা জানাচ্ছেন বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত  শিক্ষক  তারকেশ্বর  মণ্ডল। (ইনসেটে) অভিযুক্তকাউন্সিলর শেখ বশির আহমেদ। ছবি: উদিত সিংহ।

চড় খাওয়ার কথা জানাচ্ছেন বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তারকেশ্বর মণ্ডল। (ইনসেটে) অভিযুক্তকাউন্সিলর শেখ বশির আহমেদ। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

দলের এক ব্লক সভাপতি অস্ত্র-সহ বিমানবন্দরে ধরা পড়ে জেল-হাজতে রয়েছেন। এক সপ্তাহ পেরোলেও দলীয় ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল। কিন্তু শনিবার জেলার এক কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন খবর পাওয়া মাত্র (পরে সে অভিযোগ তুলেও নেওয়া হয়েছে) দলের এক পুরপিতাকে বহিষ্কার করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলশাসক দল। বিরোধী কটাক্ষে, ‘‘পাপেরলঘু-গুরু ব্যাপারটাই গুলিয়ে গিয়েছে।’’

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও ঘটনায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নরেনের (পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) ঘটনা আলাদা। সে ক্ষেত্রে জেলা থেকে রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার-ইন-চার্জ) তারকেশ্বর মণ্ডলের সঙ্গে শহরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা শেখ বশির আহমেদ ওরফে বাদশার বিবাদ চলছিল অনেক দিনই। দু’জনেই বাবুরবাগের বাসিন্দা। তারকেশ্বরবাবু তৃণমূলের পুরনো কর্মী। বাদশা ২০০৯ সালে দলে আসেন। ২০১৩ সালে বর্ধমান পুরভোটে ওই ওয়ার্ডে টিকিট পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন দু’জনেই। শেষমেশ প্রার্থী হন বাদশা। তার পরে কোন্দল আরও বাড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া রাজ কলেজে আগে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বাদশা ও তাঁর অনুগামীদের। কিন্তু বছর তিনেক আগে তারকেশ্বরবাবু ভারপ্রাপ্ত হওয়ার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই হচ্ছিল ঠোকাঠুকি। এ দিন দুপুরে বর্ধমানের লাকুরডি এলাকায় এক অনুষ্ঠান থেকে তারকেশ্বরবাবু যখন বেরোচ্ছিলেন, বাদশা সেখানে ঢুকছিলেন। তখনই গোলমাল বাধে।

বিকেলে তারকেশ্বরবাবুর অভিযোগ ছিল, ‘‘আমাকে ঘিরে ধরেন কাউন্সিলর-সহ কয়েক জন। চড় মারে ও রিভলবার উঁচিয়ে হুমকি দেয় ওরা। তার পরে টাকার ব্যাগ ও সোনার চেন ছিনিয়ে পালায়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই কাউন্সিলর বারবার বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকতে চেয়েছেন। কলেজের স্বার্থে তাতে বাধা দেওয়ায় আক্রমণ করলেন।” ঘটনার পরেই কলেজের টিএমসিপি-র কিছু কর্মী-সমর্থক বর্ধমান থানায় বিক্ষোভ দেখান। নেতৃত্বে ছিলেন খোদ তারকেশ্বরবাবু। পরে অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।

বিকেলেই বাদশাকে বহিষ্কারের খবর চাউর হয়। কিন্তু সন্ধ্যার মুখে লিখিত আবেদন পাঠিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন তারকেশ্বর। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘ওঁর অভিযোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি তা প্রত্যাহার করেছেন।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, তারকেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কাউন্সিলরের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। উত্তেজনায় অভিযোগ করেছিলেন। এর পর থেকেই তারকেশ্বরের মোবাইল বন্ধ।

পক্ষান্তরে, বাদশার বক্তব্য, ‘‘ওই শিক্ষকের মদতে কলেজে বহিরাগতদের আখড়া হয়েছে বলে শুনেছিলাম। প্রতিবাদ করায় আমার সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি হয়। মারধর করিনি।’’ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে বহিষ্কারের কথা জানালেও, বাদশার দাবি রাত পর্যন্ত দল তাঁকে কিছু জানায়নি।

অভিযোগ প্রত্যাহার হলেও অভিযুক্তকে বহিষ্কার করার পিছনে শাসক দলের গোষ্ঠী-রাজনীতিই দেখছেন বিরোধীরা। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কটাক্ষ, ‘‘ছুটকো ঘটনায় দল থেকে বার করে দিলাম, আর পুলিশের হাতে ধরা পড়া নেতাকে রেখে দিলাম—এতে জনতা কী বুঝবে! নরেনবাবুকে দলে রাখার পিছনে কী যুক্তি রয়েছে শাসক দলের নেতারা ভালই জানেন।’’

তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস শুধু বলেছেন, ‘‘নরেন নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE