Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাস রুখতে ডিএমদের ১১ দাওয়াই কমিশনের

বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা প্রতিদিনই সন্ত্রাস, মারধর, ভীতি প্রদর্শনের অজস্র অভিযোগ জানাচ্ছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু একই সঙ্গে অভিযোগ উঠছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। বিরোধীদের বক্তব্য, জেলা প্রশাসনের রিপোর্টে তাঁদের করা অভিযোগের কোনও প্রতিফলনই থাকছে না। এমনকী কিছু জেলা প্রশাসন নাকি আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত রিপোর্ট নিবার্চন কমিশনে পাঠাতেই উৎসাহী নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা প্রতিদিনই সন্ত্রাস, মারধর, ভীতি প্রদর্শনের অজস্র অভিযোগ জানাচ্ছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু একই সঙ্গে অভিযোগ উঠছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। বিরোধীদের বক্তব্য, জেলা প্রশাসনের রিপোর্টে তাঁদের করা অভিযোগের কোনও প্রতিফলনই থাকছে না। এমনকী কিছু জেলা প্রশাসন নাকি আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত রিপোর্ট নিবার্চন কমিশনে পাঠাতেই উৎসাহী নয়।

৯২টি পুরসভার নির্বাচনের মুখে প্রশাসনের তরফে এমন ঢিলেঢালা মনোভাবের অভিযোগ পেয়ে কড়া মনোভাব নিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গত সোমবার ১৯ জন জেলাশাসককে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে নিরপেক্ষ এবং কড়া ব্যবস্থা নিতে ১১ দফা নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। যে কোনও ধরনের অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, জেলাশাসকদের কাছে তার বিশদ রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি।

জেলাশাসকদের উদ্দেশে কমিশনার লিখেছেন, সব দল যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অভিযোগ এলে কী ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে সে সম্পর্কেও নির্দিষ্ট কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। কোনও জেলায় জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ দায়ের হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি, এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা-ও জানাতে বলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে কমিশনের অনুরোধ, নির্বাচন সংক্রান্ত হিংসা-মারামারি নিয়ে থানা, জেলাশাসক কিংবা এসপি-র কাছে তারা যেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় থানা এই ধরনের অভিযোগ নিতে চাইছে না, অথবা নিলেও নিষ্ক্রিয় থাকছে বলে দাবি বিরোধী দলগুলির।

এই পরিস্থিতিতেই সক্রিয় হলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। কেন?

কমিশন সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলায় শাসক দলের বিরুদ্ধে যে ভাবে হুমকি দিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো, তাদের মিছিল বা সভায় হামলার অভিযোগ উঠছে, তাতে প্রশাসন কঠোর মনোভাব না নিলে কমিশনের নিরপেক্ষতাই প্রশ্নের মুখে পড়বে। বস্তুত, তা পড়ছেও। বিরোধীরা কেউ কেউ বলছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কার্যত সরকারের কথাতেই চলছেন। গত সপ্তাহেই পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি পুরভোট নিয়ে ডাকা সর্বদল বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে রিটার্নিং অফিসার-সহ পর্যবেক্ষকরা ছিলেন। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে বাম-বিজেপিও। সোমবার আবার তুফানগঞ্জে পুরভোটের প্রস্তুতিতে ডাকা সর্বদল বৈঠকেও বিরোধী বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের প্রচার চালানোর সময় বাধা দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণেই কমিশনের ভাবমূর্তির কথা ভেবে জেলাশাসকদের উপর চাপ বাড়াতে ১১ দফা নির্দেশ জারি করেছেন সুশান্তবাবু। এর আগে ভোটদানের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে শাসক দলের প্রস্তাব তিনি মানেননি। সেই সঙ্গে ভোটারদের মনে আস্থা জাগাতে স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নেও তিনি রাজ্য সরকারের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে রাজ্য নীতিগত ভাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে কোনও উত্তর না আসায় সরকারকে ফের চিঠি দেওয়ার পক্ষপাতী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।

কোচবিহারের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি উল্গানাথন বলেন, “কমিশনের চিঠি পেয়েছি। জেলা থেকে সব রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।” শিলিগুড়ি পুরসভার রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক দ্বীপাপ প্রিয়ার কথায়, “কমিশনের সব নির্দেশ মেনেই চলা হচ্ছে। সব রিপোর্ট সময় মতো কমিশনে পাঠানো হয়।” দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসক বলেন, ‘‘এত দিন রুটিন রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছিল। এ বার আরও বিস্তারিত ভাবে রোজ রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’

যদিও কমিশনের এক মুখপাত্রের দাবি, এত দিন এই কাজটিই যথাযথ ভাবে হচ্ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, পুরভোট ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে। সেই দিন থেকেই যে সব জেলায় ভোট হচ্ছে, তার রিটার্নিং অফিসার এবং জেলা নির্বাচনী অধিকারিককে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৈনিক রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু তা ঠিকমতো হচ্ছিল না বলেই কড়া হতে হল কমিশনারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE