Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সন্দেহভাজন তিন মাওবাদী লিঙ্কম্যান ধৃত

এ বার মাওবাদীদের লিঙ্কম্যান সন্দেহে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের দাবি, সোমবার রাতে বলরামপুরের উরমা স্টেশন এলাকায় মাওবাদীদের পোস্টার লাগানোর সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় ওই তিন জন সন্দেহভাজনকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

এ বার মাওবাদীদের লিঙ্কম্যান সন্দেহে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের দাবি, সোমবার রাতে বলরামপুরের উরমা স্টেশন এলাকায় মাওবাদীদের পোস্টার লাগানোর সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় ওই তিন জন সন্দেহভাজনকে। ধৃতদের কাছ থেকে মাওবাদীদের ব্যানার ও পোস্টার মিলেছে।

সোমবার সকালেই বাঘমুণ্ডি থানার কয়েকটি এলাকায় মাওবাদী পোস্টার মিলেছিল। সেই পোস্টারে আক্রমণ করা হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার ২৪ ঘণ্টা পরেই বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকা থেকে মাওবাদী পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। ঘাটবেড়া ও খেঁকরিডি গ্রাম থেকে পাওয়া সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা ওই সব পোস্টার ও ব্যানারে ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘটনা হল, মঙ্গলবার থেকেই ‘শহিদ সপ্তাহ’ শুরু হয়েছে। আর তার আগে ও পরে পরপর পোস্টার মেলার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের।

এক সময় এই ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চলটি মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বুদ্ধেশ্বর হেমব্রম, অজিত হেমব্রম ও বৈদ্যনাথ সোরেনেরও বাড়ি ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চলের মাহুলিটাঁড় গ্রামে। এই গ্রামটিকে নিয়ে বরাবরই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা চিন্তায় থাকেন। এই গ্রামে এসেই মাওবাদীরা এখনও আশ্রয় নেয় বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি। গত বছর পঞ্চায়েতের এক কাপড় বিলির কর্মসূচিও পুরোপুরি ‘বয়কট’ করেছিলেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। জেলার তৃণমূল নেতাদের একাংশই একান্ত আলোচনায় কবুল করেছেন, হাজার চেষ্টা করেও মাহুলিটাঁড়কে ‘বাগে’ আনা যায়নি। পুলিশের দাবি, এখন মাওবাদীদের যে স্কোয়াডটি অযোধ্যা পাহাড় তল্লাটে ঘোরাফেরা করছে, তার একাধিক সদস্যের বাড়ি এই গ্রামেই।

পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা আবার রীতিমতো কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গত ৫ জুলাই রাতে ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকা ঘেঁষা উরমা স্টেশনের দক্ষিণ কেবিনের বাইরে বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনতে পান কেবিনে কর্তব্যরত দুই কর্মী। ঝুঁকি না নিয়ে রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই শাখার ট্রেন চলাচল। লাইনে বিস্ফোরক রাখা থাকতে পারে, এই আশঙ্কায় দু’টি এক্সপ্রেস ট্রেনকে বরাভূম (বলরামপুর) ও কাঁটাডি স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে রাতেই রেলপুলিশ, আরপিএফ, যৌথ বাহিনী রেললাইন ধরে তল্লাশি চালিয়েও বিস্ফোরকের সন্ধান পায়নি। পুলিশের দাবি, তখন থেকেই উরমা স্টেশন নজরে রাখা হয়েছিল। সোমবার রাতে ধৃতেরা স্টেশন এলাকায় পোস্টার লাগাতে এলে তাঁদের হাতেনাতে ধরা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘হতে পারে যারা উরমায় পোস্টার লাগাচ্ছিল, তারাই বলরামুপের গ্রামগুলিতে পোস্টার লাগিয়েছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।’’ ধৃত তিন জনকে এ দিন পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠান। মাহুলিটাঁড় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য দাবি, পুলিশ এই তিন জনের মধ্যে এক জনকে শুক্রবার বলরামপুরেরই বেলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এবং বাকি দু’জনকে গ্রাম থেকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ অবশ্য এই দাবি মানতে চায়নি। ধৃতেরাও এ দিন আদালত চত্বরের ভিতর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE