সন্তোষ ও তাঁর পরিজনদের সঙ্গে ক্লাবের ছেলেরা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
একটু সহমর্মিতা, আর প্রযুক্তির সহযোগিতা— এরই সাহায্যে ঘরে ফিরলেন মধ্যপ্রদেশের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক।
মাস দু’য়েক আগের কথা। দেঙ্গার সুবর্ণপুর লিচুতলায় চায়ের দোকানে বসেছিলেন স্থানীয় একটি ক্লাবের সম্পাদক সান্টু পুরকাইত। চোখে পড়ে, ভবঘুরে এক যুবক আবর্জনা থেকে খাবার খুঁটে খাচ্ছে। সান্টুবাবু অবশ্য ভবঘুরের পরিচয় জানতে এগিয়ে যান। অর্থহীন চাহনি ছাড়া উত্তর মেলে না।
হাল ছাড়েননি সান্টু ও তাঁর ক্লাবের ছেলেরা। তাঁদের স্নেহ, ভালবাসা, চিকিৎসায় স্বর ফোটে ভবঘুরে ছেলের। জানা যায় বাড়ির হদিস। ভুল হল, বছর আঠাশের যুবকের মুখ থেকে জানা যায় স্রেফ একটা জেলার নাম, ‘গুনা।’ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মেঘালয়— এত বড় দেশে একটা জেলার নাম খুঁজে পাওয়াটা গন্ধমাদন পর্বতে বিশল্যকরণী খোঁজার থেকে কম কঠিন ছিল না। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি সেই পথের হদিস দেয়। শেষমেশ খোঁজ মিলেছে ছেলেটির বাবা-মায়ের। মঙ্গলবার বাড়িও ফেরানো
গিয়েছে তাকে। গোটা প্রক্রিয়াটি অবশ্য সহজ ছিল না। সান্টুবাবু জানান, উদ্ধার করার পরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটির যত্নআত্তি শুরু করেন সকলে মিলে। খাবার-দাবার, পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়। থাকার ব্যবস্থা হয় ক্লাবঘরে। কিন্তু তার স্মৃতি ফেরাতে না পারলে বাকি জীবনটা নেহাত ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হয়েই কাটাতে হবে ছেলেটিকে, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন সান্টুবাবুরা। এ বার তাই শুরু হয় চিকিৎসা পর্ব।
যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় পাভলভ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, কিছু দিন ওষুধপত্র খেলেই অবস্থার উন্নতি হবে। হয়ও তাই। দিন কয়েক আগে এটা ওটা অসংলগ্ন কথা বলতে বলতেই ছেলেটি জানায়, তার বাড়ি গুনা জেলায়। রবিউল ইসলাম নামে ক্লাবের এক সদস্য ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারেন, জেলাটি মধ্যপ্রদেশে। রবিউল জানান, আন্দাজে ঢিল ছুড়তে ছুড়তে খোঁজ মেলে বিজয় খুশওয়া নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের। তাঁকে যুবকের ছবি পাঠানো হয় হোয়াটস অ্যাপে। ওই সাংবাদিক আবার ছবিটি সোস্যাল মিডিয়ায় তুলে দেন। যা চোখে পড়ে, হারানো যুবকের এক প্রতিবেশীর। খবর যায় গাঁয়ের বাড়িতে।
ক্লাব সূত্রের খবর, সেখান থেকে কিছু ছবি আসে রবিউলের মোবাইলে। যা দেখে ছেলেটি ঝলমল করে ওঠে। বলে, এ সব তো তার বাবা-মা-দিদির ছবি। এখন আর ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ নন সন্তোষ খুশওয়া। জানা গিয়েছে, খেতমজুর পরিবারের ছেলেটি পরিবারের সঙ্গে বছর তিনেক আগে বিহারের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিল। পথে গয়া স্টেশনে হারিয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়ে সন্তোষ কোথায় ছিল, কী ভাবেই বা দেগঙ্গায় এসে পৌঁছল, তা হয় তো অজানাই থেকে যাবে। কিন্তু মঙ্গলবার দেগঙ্গায় এসে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পেরে আত্মহারা বাবা প্রেম নারায়ণ। বললেন, ‘‘ক্লাবের ছেলেদের কাছে আমার ঋণ শোধ হওয়ার নয়।’’
ক্লাবটির রেজিস্ট্রেশন থাকলেও সরকারি সাহায্য পান না বলে জানালেন সান্টুবাবু। তবে সন্তোষকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে পেরে আপ্লুত সকলেই। সাংবাদিক বিজয়ের ভূমিকারও প্রশংসা করতে ভুললেন না। ছেলেটি বাড়ি ফিরেছে জেনে উচ্ছ্বসিত বিজয়ও। ফোনে বললেন, ‘‘সমাজের নানা স্তরের মানুষের কাছে ওর ছবি পাঠিয়েছিলাম। ছেলেটি বাড়ি ফিরতে পারার পিছনে আমার যে সামান্য অবদান আছে, তা জেনে বড্ড ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy