দু’ বছর ধরে তাকে খুঁজে পায়নি জেলা পুলিশ। হদিস পায়নি বিশেষ তদন্তকারী দল সিট-ও। অথচ, সেই ব্যক্তি কি না এলাকায় বসে জাল নোটের কারবার ফেঁদেছিল। শুক্রবার রাতে পাড়ুই থেকেই জাল নোট পাচারের অভিযোগে, সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, ফেরার শেখ আসগরকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। আর তারপরেই ঘুম ছুটে গিয়েছে শাসকদলের। বিজেপি-র অভিযোগ, আসগরকে গ্রেফতার করার পর থেকেই পাড়ুইয়ে বিরোধীদের ধরপাকড়ে বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ।
শুক্রবার পাড়ুই থানার বল্লভপুর মাঝিপাড়ার কাছে থেকে আসরগকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এলাকায় তোলাবাজি, মারধর, বোমাবাজি, লুঠপাট-সহ একাধিক মামলায় তার নাম জড়িয়েছিল। জেলা পুলিশের দাবি, পাড়ুই থানা এলাকায় বরাবর এমন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, শেখ আসগরের বিরুদ্ধে কোনও খুনের মামলা ছিল না। জেলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের রাতে, খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল কর্মী সাগরচন্দ্র ঘোষ। ওই খুনের ঘটনার অন্যতম মুখ্য অপরাধী হিসেবে প্রকাশ্যে আসে শেখ আসগরের নাম।
আসগর এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ালেও, চাপের কারণে তাকে পুলিশ ধরছিল না বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার। এমনকী জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা, সিআইডি এবং সিটের তদন্তকারী দলকেও বারে বারে একই অভিযোগ জানিয়েছিল নিহত সাগরবাবুর পরিবার। শুধু তাই নয়, ওই সময় মামলা প্রত্যাহার করার জন্য এবং সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্যও নাকি চাপ দিয়েছিল শেখ আসগর ও তার শাগরেদরা বলে অভিযোগ জানিয়ে বারে বারে সরব হয়েছেন নিহতের পরিবার। ঘটনার পরেও, শেখ আসগর নিহত সাগরবাবুর বাড়ির অদূরে বার কয়েক বোমাবাজি করে ভয় দেখিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের একাধিক বার জানিয়েছিলেন তাঁরা।
কে এই শেখ আসগর?
শাসক দল তৃণমূলের পাড়ুই এলাকার দাপুটে নেতা শেখ মুস্তফার তৃতীয় সন্তান শেখ আসগর এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত। বছর বত্রিশের আসগর ও তাঁর বাবার দাপট এলাকায় কারোও অজানা নেই। এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন করার শুরু থেকেই বিরোধীদের ‘সবক’ শেখানোতে সিদ্ধহস্ত শেখ আসগর। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন করে বাবার সঙ্গে গোরু, মোষের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বছর দশেক আগে গ্রামেরই মোল্লাপাড়ায় তার বিয়ে হয়। বোলপুর-সিউড়ি মুখ্য রাস্তার উপর সাত্তোরের বাসস্ট্যান্ড পাড়ায় শেখ মুস্তফা এবং তাঁর ছেলেরা থাকেন। স্ত্রী শাহানাজ বিবি এবং দুই মেয়েকে নিয়ে একই চত্বরে থাকত সে।
বাবার হাত ধরে এলাকায় তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর গোরু-মোষের কারবারে খুব একটা তাকে যেত না বলে স্থানীয়দের দাবি। বছর দুয়েকের কিছু বেশি দিন ধরে এলাকায় বাসিন্দাদের ঘর বার তৈরির জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট-সহ ইমারতি জিনিসের ব্যবসা করছিল শেখ আসগর। ইতিমধ্যেই, সাত্তোর বাসস্টপ এলাকায় বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে বার কয়েক ঝামেলা ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনার সময়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়, এবং তার ডান পায়ে বোমার চোট লাগে।
তবে পুলিশ, সিআইডি ও বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট-এর খাতায় ‘ফেরার’ থাকার কারণে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর কোনও এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু পুলিশ নাকি তার ‘টিকি’ পাইনি। প্রশ্ন, সাত্তোরে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে একাধিক জায়গায়। পুলিশ টহলদারি এবং নজরদারি চলে প্রায় দিনভর। তা সত্বেও জেলা পুলিশ কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। অথচ সিআইডি কলকাতা থেকে এসে গ্রেফতার করল তাকে ঘরের পাশ থেকে। সাত্তোর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বল্লভপুরের থেকে!
বধূ খুনের নালিশ। নিজস্ব সংবাদদাতা, নিতুড়িয়া ও পুরুলিয়া: বিয়ের দীর্ঘদিন পরেও সন্তান না হওয়ায় বধূকে আগুনে পুড়িয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে নিতুড়িয়া থানার হিজুলি গ্রাম থেকে স্বামী হাঁসু মল্লিক ও শ্বশুর ভুতু মল্লিককে ধরেছে নিতুড়িয়া থানার পুলিশ। এ দিন তাদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে হাঁসুর তিনদিনের পুলিশ হেফাজত হয়। তবে ভুতুকে জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গত ২৯ জুন হিজুলি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন ওই বধূ পুতুল মল্লিক (৩০)। প্রথমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল আসানসোলের শাঁকতোড়িয়ায় ইসিএলের হাসপাতালে। পরে তাঁকে বোকারোর একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ২ জুলাই সেখানেই মৃত্যু হয় পুতুলদেবীর। শনিবার ওই বধূর ভাই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy