Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাক্ষী-রক্ষায় নয়া আইনের প্রস্তাবে আপত্তি রাজ্যের

গুরুতর অপরাধের মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও পরিচয়ের গোপনীয়তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের যে সুপারিশ আইন কমিশন করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মানতে নারাজ। বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্র অন্য সব রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেরও মত চেয়েছিল। নবান্নের আপত্তির কথা ইতিমধ্যে নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, প্রস্তাবটি অবাস্তব। এটি কার্যকর করলে সরকারের ঘাড়ে যেমন বাড়তি খরচের বোঝা চাপবে, তেমন বিচার প্রক্রিয়াও অযথা বিলম্বিত হবে বলে নবান্ন মনে করছে।

সুপ্রকাশ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

গুরুতর অপরাধের মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও পরিচয়ের গোপনীয়তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের যে সুপারিশ আইন কমিশন করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মানতে নারাজ। বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্র অন্য সব রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেরও মত চেয়েছিল। নবান্নের আপত্তির কথা ইতিমধ্যে নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, প্রস্তাবটি অবাস্তব। এটি কার্যকর করলে সরকারের ঘাড়ে যেমন বাড়তি খরচের বোঝা চাপবে, তেমন বিচার প্রক্রিয়াও অযথা বিলম্বিত হবে বলে নবান্ন মনে করছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, আইন কমিশনের প্রস্তাবটি রাজ্যগুলি মেনে নিলে কেন্দ্র নতুন আইন প্রণয়ন করবে। সেই মতো ফৌজদারি কার্যবিধি পাল্টানো হবে। কমিশনের যুক্তি, গুরুতর অপরাধের ঘটনায় রুজু হওয়া ফৌজদারি মামলায় আকছার অভিযোগ ওঠে, সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে আদালতে সাক্ষ্যদান থেকে বিরত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষত অভিযুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হলে নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে সাক্ষীরা আদালতমুখো হন না।

এ হেন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই সাক্ষীদের স্বার্থরক্ষায় আইন কমিশনের এই উদ্যোগ। যার ফলশ্রুতি হিসেবে কমিশনের ১৯৮তম রিপোর্টের সুপারিশ, সাক্ষীদের (হুমকিপ্রাপ্ত) নিরাপত্তা ও তাঁদের পরিচয়ের গোপনীয়তা সুরক্ষিত করতে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হোক। কেন্দ্র সেই মতো একটি বিল তৈরিতে উদ্যোগী হয়, যার নাম দেওয়া হয়, ‘সাক্ষী রক্ষা বিল।’ আর ফৌজদারি আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির বিষয়টি যে হেতু কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ এক্তিয়ারভুক্ত, তাই এ ব্যাপারে মতামত চেয়ে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (বিচার)।

কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রস্তাবে পশ্চিমবঙ্গের যে আপত্তি আছে, তা জানিয়ে জুলাইয়ের শেষে রাজ্যের আইন-সচিব মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দিল্লিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। আপত্তির কারণ কী?

রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি: আইনটিকে নীতিগত ভাবে মেনে নিলেও বাস্তবে কার্যকর করা কঠিন। তাঁর ব্যাখ্যা: কোনও সাক্ষী ভয় দেখানোর অভিযোগ আনলেও তাঁর বক্তব্যকে পুরোপুরি সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায় না। সত্যিই তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এবং তিনি সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন, এটা প্রমাণ করতে বিচারককে আবার গোপন শুনানি করতে হবে। অন্য দিকে যাঁর বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ, তিনিও পাল্টা আবেদন করতে পারেন। সব মিলিয়ে আসল মামলার বিচার প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা থাকবে। রাজ্যের আরও যুক্তি: আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন কার্যকর হলে হুমকিপ্রাপ্ত সাক্ষীদের সুরক্ষা জোগানোর বাড়তি আর্থিক দায় বহনের প্রশ্নও থাকছে।

কোনও রাজ্য আপত্তি জানালে কেন্দ্রের নতুন আইন তৈরির প্রস্তাবের কী হবে? নয়াদিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক অফিসারের দাবি, বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন। অধিকাংশ রাজ্য যদি নতুন আইনের পক্ষে মত দেয়, সে ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নে বাধা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

protection of witness suprokash chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE