Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

সিপিএমের ঘুষ খেয়েই মামলা ভেস্তেছে পুলিশ, দাবি তৃণমূলের

সরকার তৃণমূলের, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পুলিশমন্ত্রী। অথচ তৃণমূলের দাবি, পুলিশকে ঘুষ দিয়ে সজল ঘোষ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বিপথে চালিত করেছে সিপিএম। ওই খুনের মামলায় পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল নেতারা যে চাপে পড়ে গিয়েছেন, তাতে সন্দেহ নেই বিশেষ করে সেই নেতারা, যাঁরা গোড়া থেকে মামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। যে পাঁচ জন নিজেদের প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছিলেন, আদালতের রায়ের পরে তাঁদের কথার বিশ্বাসযোগ্যতাও এখন প্রশ্নের মুখে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

সরকার তৃণমূলের, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পুলিশমন্ত্রী। অথচ তৃণমূলের দাবি, পুলিশকে ঘুষ দিয়ে সজল ঘোষ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বিপথে চালিত করেছে সিপিএম।

ওই খুনের মামলায় পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল নেতারা যে চাপে পড়ে গিয়েছেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সেই নেতারা, যাঁরা গোড়া থেকে মামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। যে পাঁচ জন নিজেদের প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছিলেন, আদালতের রায়ের পরে তাঁদের কথার বিশ্বাসযোগ্যতাও এখন প্রশ্নের মুখে।

তৃণমূল নেতা সজল যে দিন খুন হন, সেই ২০১২-র ৯ জানুয়ারি দুপুরে পূর্বস্থলী কলেজে সংঘর্ষে টিএমসিপি-র কয়েক জন জখম হয়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের দেখতে রাতে হাসপাতালে যান কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী। পুলিশকে তাঁরা জানান, সজলও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের অনেকের সামনেই হাসপাতালের গেটের বাইরে প্রদীপ সাহা সজলকে চেপে ধরেন এবং এসএফআই সমর্থক লোকনাথ দেবনাথ তাঁকে গুলি করে বলে অভিযোগ। নিজেকে ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ বলে দাবি করে পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় নবদ্বীপ থানায় সেই অভিযোগ দায়ের করেন।

ত্রিপুরা থেকে পড়তে আসা লোকনাথ আজও ধরা পড়েনি। কিন্তু প্রদীপবাবু-সহ বাকি পাঁচ অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়ায় অভিযোগের সত্যতা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সিপিএম ইতিমধ্যে দাবি করেছে, সজল হাসপাতালের সামনে আদৌ খুন হননি। বরং দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তাঁকে অন্যত্র খুন করে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রহস্যের কিনারা করতে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন প্রদীপবাবু। প্রয়োজনে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশকেই দায়ী করছেন শাসক দলের কিছু নেতা।

শুক্রবার পঙ্কজবাবু দাবি করেন, “আর্থিক লেনদেনের কারণেই মামলা প্রভাবিত হয়েছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, সাক্ষীরা আদালতে যা বলেছেন আর তদন্ত করে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে মিল নেই। তাই অপরাধ প্রমাণ হয়নি। পঙ্কজবাবুর দাবি, “সিপিএমের থেকে টাকা খেয়ে পুলিশ এই ভাবে মামলা উল্টে দিয়েছে।” তদন্তকারী বিভাস সেন নদিয়ারই নাকাশিপাড়া থানায় কর্মরত। তৃণমূলের অভিযোগ শুনে তাঁর চ্যালেঞ্জ, “তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ থাকলে ওরা আমার নামে মামলা করুক! আমি যে সৎ, প্রমাণ করে দেব।”

পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় রে-রে করে উঠেছে সিপিএমও। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু করের কটাক্ষ, “পুলিশ তো কবেই তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে! শাসকদলের নির্দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসাচ্ছে। আর এখানেই তা উল্টে গেল! শুনলে লোকে হাসবে!”

ঠিক কোন তথ্যপ্রমাণের জোরে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল নেতারা? জবাবে পাল্টা প্রশ্ন সাজিয়ে দেন পঙ্কজবাবু ১) তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ প্রদীপ সাহাকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ, গ্রেফতারির পরে নিরাপদে হেফাজতে রাখার জন্য রাত ২.৩৫-এ তাঁকে নবদ্বীপ থানা থেকে ধুবুলিয়া থানায় নিয়ে আসা হয় বলে নথিবদ্ধ রয়েছে। কেন এই অসঙ্গতি? ২) সজলের পোশাকে রক্তের নমুনা ও দেহ থেকে পাওয়া গুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হল না কেন? ৩) গুলিটি আদালতে পেশ করা হয় নি কেন? ৪) কেন পুলিশ লোকনাথকে খুঁজে পেল না?

নবদ্বীপ থানার আইসি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষও বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।” যে চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করেছিলেন, তাঁকেও ছাড় দিচ্ছে না তৃণমূল। সাক্ষ্যে তিনি যা বলেছিলেন, তাতে সজল খুন হন সন্ধ্যা নাগাদ। অথচ রাত ১১টা নাগাদ তাঁকে গুলি করা হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। পঙ্কজবাবুর প্রশ্ন, কোনও রকম পরীক্ষা ছাড়াই শুধু দেহ দেখে ওই চিকিৎসক কী ভাবে বললেন, কত ঘণ্টা আগে সজল মারা গিয়েছেন? ময়নাতদন্তে অভিজ্ঞ হুগলির এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, “যে কোনও মৃত্যুর ক্ষেত্রেই দেহ দেখে মৃত্যুর সময় মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানেই তার রাস্তা আছে।”

তা হলে খুনি কে? পঙ্কজবাবু ফের বলেন, “সেটা প্রদীপবাবুকেই জিজ্ঞাসা করুন না। উনিই তো ত্রিপুরা থেকে পড়তে আসা লোকনাথের লোকাল গার্জেন ছিলেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sajal ghosh cpm debashis bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE