Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিভিক ভলান্টিয়ারদের সভায় হামলা, গ্রেফতার

কিছু দিন আগেও তাঁরা ছিলেন ‘পুলিশ’। এখন সিভিক ভলান্টিয়াররা বুঝছেন পুলিশ কাকে বলে! বিনা অনুমতিতে সমাবেশের চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগে শুক্রবার মালদহে সিভিক ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পোড়িয়া সহ ৫৬ জনকে বেলা ১১টায় পুলিশ গ্রেফতার করে। দিনভর তাঁদের ইংরেজবাজার থানায় রাখা হয়। রাত ৮টা নাগাদ তাঁরা জামিনে ছাড়া পান।

সমাবেশ থেকে গ্রেফতার হওয়ার পরে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের নেতা সঞ্জয় পোড়িয়া।—নিজস্ব চিত্র।

সমাবেশ থেকে গ্রেফতার হওয়ার পরে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের নেতা সঞ্জয় পোড়িয়া।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

কিছু দিন আগেও তাঁরা ছিলেন ‘পুলিশ’। এখন সিভিক ভলান্টিয়াররা বুঝছেন পুলিশ কাকে বলে!

বিনা অনুমতিতে সমাবেশের চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগে শুক্রবার মালদহে সিভিক ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় পোড়িয়া সহ ৫৬ জনকে বেলা ১১টায় পুলিশ গ্রেফতার করে। দিনভর তাঁদের ইংরেজবাজার থানায় রাখা হয়। রাত ৮টা নাগাদ তাঁরা জামিনে ছাড়া পান। অভিযোগ, এই সময়ের মধ্যে ঠিক মতো খাবারও দেওয়া হয়নি তাঁদের। সন্ধ্যা নাগাদ আরও কিছু ভলান্টিয়ার সে কারণে ওই থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান। তাঁদেরও পুলিশ মেরে থানা থেকে বার করে দেয় বলে অভিযোগ। সঞ্জয়বাবুর দাবি, “আমরা কাজের দাবিতে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। আমাদের প্রাণে মারার চেষ্টা করছে পুলিশ।”

মে মাসে লোকসভা ভোটের আগে দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে সওয়া এক লক্ষেরও বেশি সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে রাজ্য। তখন অভিযোগ ওঠে, ‘জনমোহিনী রাজনীতি’র জন্যই লোকসভা ভোটের মুখে রাতারাতি এতগুলি পরিবারের সমর্থন নিশ্চিত করতেই রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত। তবে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা সংগঠন তৈরি করে সরকারের উপরে চাপ দিতে শুরু করলে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। ভলান্টিয়ারদের দাবি ছিল, তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করতে হবে। যত দিন না তা করা হচ্ছে তত দিন সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে, পিএফ ও ইএসআই-এর মতো সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে এবং পুলিশের কাজে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

এর পর থেকে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা যত রুখে দাঁড়াচ্ছিলেন, সরকারও ততই চাপ বাড়াচ্ছিল। ১০ জুলাই সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়াররা কলকাতার রানি রাসমণি রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তার পরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। সেই মাসেরই শেষে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ারদের নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দেয় নবান্ন। তখন অভিযোগ ওঠে, ‘জনমোহিনী রাজনীতি’ বুমেরাং হতেই ভলান্টিয়ারদের নাম থেকে পুলিশ শব্দটি ছাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। প্রশাসন জানায়, পুলিশ শব্দটি ছাঁটা হওয়ায় ওই ভলান্টিয়ারদের স্থায়ী চাকরির দাবি অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে বলেও মনে করছে নবান্ন।

সিভিক ভলান্টিয়াররা অবশ্য আন্দোলন থামাননি। রাজ্য পুলিশ তাঁদের দমিয়ে রাখতে বারবার সভা করতে বাধা দিতে শুরু করে। আন্দোলনে সামিল কয়েকশো যুবক কর্মচ্যুতও হন। মালদহেরই বাসিন্দা প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার বাপি পাল নামে এক যুবক সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করে গ্রেফতার হন। সে সময় সঞ্জয়বাবু বলেন, এমন মন্তব্য ঠিক নয়, তবে চাকরি যাওয়ার পরে হতাশা থেকেই বাপি ওই কাজ করেন।

রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে সভা করে সঞ্জয়বাবু জানান, ১১ নভেম্বর রানি রাসমণি রোডেই প্রতিবাদ সভা করবেন তাঁরা। তার আগে এ দিন মালদহের বৃন্দাবনী ময়দানে টাউন হলের সামনে তাঁরা একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। সঞ্জয়বাবুদের অভিযোগ, সমাবেশ করতে লিখিত আবেদন করা সত্ত্বেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তার পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ শুরু হলে পুলিশ গিয়ে মারধর করে অনুষ্ঠান ভেস্তে দেয় বলে অভিযোগ। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “অনুমতি না নিয়ে সমাবেশের চেষ্টা হয়। সে জন্য গ্রেফতার করে পরে ব্যক্তিগত জামিনে ওই ভলান্টিয়ারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” পুলিশ সুপারের দাবি, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ দিনই এলাকায় মাইকে পুলিশ ঘোষণা করে, ইংরেজবাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সঞ্জয়বাবুর অবশ্য দাবি, “মালদহে এই নিয়ে পাঁচ বার আমাদের সভা ভেস্তে দিল পুলিশ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

civic police maldah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE