বিকোচ্ছে সিল্ক-খেসের শাড়ি, ডোকরা, রুপোয় রঙিন কাজের গয়নায়।
ঠোঁটে নিয়নডার্ক লিপস্টিক। পরনে শাড়ি বা শালোয়ার, ক্যাপ্রি অথবা কুর্তি, টপ কিম্বা টিউনিক যাই হোক না কেন, গলায় জার্মান সিলভারের ‘কটকটি’ হার, ডোকরার ‘ঝিনুকমালা’ ব্রেসলেট আর কানে পোড়ামাটির ‘বাহামনি’ দুল চাইই চাই। এ বারের পুজোর ট্রেন্ড তো এটাই!
শাড়ির পরে গয়না। পুজোর সাজের বাজার এ বার বাংলা সিরিয়ালের দখলে। পুজোর বাজারে দু’একটি জনপ্রিয় বাংলা সিরিয়ালের নামে শাড়ির চাহিদা কয়েক বছর ধরেই রয়েছে। এক ‘বাহা শাড়িই’ বছর কয়েক ধরে নকশায় সামান্য হেরফের ঘটিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু এ বাইরে আর একটা দু’টো নয়। কমপক্ষে ডজন খানেক সিরিয়ালের নামে শাড়ি এসেছে বাজারে। সেই সঙ্গে জুড়েছে সিরিয়ালের গয়না। ছোটপর্দায় বাংলা সিরিয়ালের নায়িকা, খলনায়িকা, সহ-নায়িকা থেকে পার্শ্বচরিত্রের গলার হার থেকে কানের দুল সব কিছুরই চাহিদা এ বার তুঙ্গে। এমনকী বাদ যায়নি রূপকথার রাক্ষসীর গায়ের গয়নাও। বরং তার চাহিদা অন্যগুলোর থেকে বেশি।
ফলে বাজারে হটকেকের মতো বিকোচ্ছে ‘কটকটি’ হার-বালা, ‘ঝিনুকমালার’ ব্রেসলেট, দুল, ‘বাহামনির’ গয়না থেকে ‘চোখের বালির’ স্বর্ণালঙ্কারের আদলে সিটিগোল্ডের গয়না। সাদা জার্মান মেটাল থেকে ডোকরার তৈরি বিরাট বিরাট হাতের বালা, গলার হাঁসুলি, লকেট, পায়ের নূপুর, আদিবাসীদের মাথার কাঁটা এখন মেয়েদের বেশি পছন্দের। এ ছাড়া কাঠ, মাটি, প্লাস্টিক, পুঁতি, পাট এবং নানা রকম স্টোনের তৈরি বেশ বড় আর রঙিন গয়না তো রয়েছে। কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ থেকে নামখানা—পুজোর বাজারে এমন ম্যাচিং গয়না নিয়ে কোথাও দ্বিমত নেই।
দোকানে দোকানে ঘুরলে এখন দেখা যাচ্ছে, ‘জলনূপুরের’ চরিত্র ‘ভূমির’ কলমকারির ওপর খেসের ‘প্যাচওয়ার্ক’ করা শাড়ির সঙ্গে ডোকরার গয়না, ‘তুমি রবে নীরবের’ নায়িকা ‘ঝিলের’ সিল্ক খেস, ‘তোমায় আমায় মিলে’-র চরিত্র ‘ঊষসীর’ হ্যান্ডলুমের শাড়ি বা ‘চোখের বালি’ সিরিয়ালের সাদা ঢাকাই জামদানির সঙ্গে সিটিগোল্ডের গয়নাকে পাখির চোখ করেছে বঙ্গললনারা। এ ছাড়াও ‘দীপ জ্বেলে যাই’ সিরিয়ালের কুর্তি কোট, ‘ইচ্ছেনদী’র কুর্তির উপরে কোট খুবই পছন্দ একটু কমবয়সীদের। দাম গড়ে সাড়ে পাঁচশো থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে। ফলে নিম্ন থেকে উচ্চবিত্ত সব ধরনের ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে সিরিয়াল-পোশাক। আর গয়না দাম আড়াইশো থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তবে বুটিক এবং দোকানের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন দু’শো থেকে পাঁচশো টাকার মধ্যেই গয়নাই বেশি কেনেন ক্রেতারা।
কেন জাঙ্ক জুয়েলারির এমন রমরমা?
উত্তরে ফ্যাশন ডিজাইনার সুস্মিতা রায় জানান, সোনার গয়না এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। রূপোর গয়না অনেকেই সে ভাবে পছন্দ করছেন না। অন্য দিকে, সাধ্যের মধ্যে দাম এবং নানা রঙের এবং ডিজাইনের হওয়ায় জাঙ্ক জুয়েলারি মেয়েদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে। এখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে চাকুরিজীবী বা গৃহবধূ সকলেই ‘ঝুটো’ গয়নায় মজেছেন।
নবদ্বীপের স্বনির্ভর হ্যান্ডিক্র্যাফট বুটিকের টুম্পা বসু জানান, এর আগে এত সিরিয়ালের নামে শাড়ি বা গয়না বাজারে আসতে দেখেননি। অনান্য বার যেখানে ‘ইষ্টিকুটুমের’ মতো দু’একটা সিরিয়ালের শাড়ি বা চুড়িদার চাইতেন। এ বার সেখানে বাজারে সিরিয়াল-পোশাকের ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে গয়না। কৃষ্ণনগরের আরও এক বুটিকের প্রধান তপোলব্ধা ভট্টাচার্যও জানান, এ বারের জার্মান সিলভার, ডোকরার মতো ধাতুর গয়নার যেমন চাহিদা তেমনি স্টোন এবং কালার ক্লের গয়নারও খুব চাহিদা। তিনি বলেন “আকারে বড়সড়, আদিবাসী ছোঁয়া আছে এমন গয়নাতেই মজেছেন মেয়েরা। সে ক্ষেত্রে সিরিয়ালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।” টুম্পাদেবীর কথায়, “বাংলা সিরিয়াল যেন এ বার পুজোয় শাড়ি গয়নার ক্যাটালগের কাজ করছে। অমুক সিরিয়ালের অমুকের শাড়ি বা গয়না বললে বুঝতেও সুবিধা হচ্ছে।”
রূপচর্চার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাঝ বয়সীদের জন্য তামাটে বা কালচে রঙের অ্যান্টিক টাইপের গয়নাই মানান সই। অন্য দিকে, কমবয়সীরা হালফ্যাশনের পোশাকের সঙ্গে কাঠ, পুঁতি-বিডসের মালা, দস্তা, রূপা, তামার সঙ্গে অক্সিডাইজের কোমর বিছে, বাজুবন্ধ পরতে পারেন। পোড়ামাটির দুল, বাঁশ অথবা ঝিনুক দিয়ে তৈরি হার, কাঠের ক্লিপের পাশাপাশি কড়ি আর পুঁতির কম্বিনেশনে তৈরি গয়না সব পোশাকের সঙ্গেই মানানসই।
তবে জাঙ্ক জুয়েলারিতে এমনিতেই একটা ভারি ভাব থাকে। তাই সাজটা ছিমছাম হওয়াই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy