পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে ধৃতকে। —নিজস্ব চিত্র।
২০১৩ সালের জুন মাসের কথা। এলাকায় হেরোইনের রমরমা কারবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় মানুষ। বিশেষত, তিতিবিরক্ত ছিলেন মহিলারা। বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা হেরোইনের নেশায় বুঁদ হয়ে রোজগারের প্রায় পুরো টাকাটাই উড়িয়ে দিয়ে আসত। সংসারে অশান্তি ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। হেরোইনের টাকা জোগাড় করার ধান্দায় ছোটখাট চুরি-ছিনতাইও চলত। এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েই চলেছিল।
বনগাঁর জয়পুর এবং সংলগ্ন কিছু এলাকার মানুষ বুঝে নেন, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত না করতে পারলে সমূহ বিপদ। এখান থেকে মাত্র চার কিলোমিটারের মধ্যেই জামতলা গ্রাম। ‘হেরোইন গ্রাম’ নামে যে গ্রামের কথা তত দিনে সংবাদমাধ্যমেরও নজরে এসেছে। একের পর এক পরিবার হেরোইনের নেশার খপ্পরে পড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে এই এলাকায়। বহু লোক সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেকে মারা গিয়েছে। তবু কারও হুঁশ ফেরেনি। জয়পুরের অবস্থাও তেমন হবে না তো, ভয় ধরে যায় এলাকার মহিলার মনে। সেই ভয়ই সঙ্ঘবদ্ধ হতে সাহায্য করে তাঁদের। তৈরি হয় ‘জয়পুর প্রমিলা বাহিনী।’
হেরোইনের কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন মহিলারা। হুমকি আসতে থাকে। পুলিশের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন মহিলারা। শেষমেশ, ২৪ জুন জয়পুরে বেআইনি হেরোইনের কারবারের বিরুদ্ধে মিছিল করেন মহিলারা। স্মারকলিপি দেওয়া হয় পুলিশের কাছে।
তারপরে নড়েচড়ে বসে পুলিশও। পরের কয়েকটা বছর ধীরে ধীরে এলাকায় হেরোইনের ব্যবসা কমতে শুরু করে। চোরাগোপ্তা বিক্রি যে হত না তা নয়, কিন্তু প্রকাশ্যে রমরমা মাদকের কারবারের উপরে রাশ টানা অনেকটাই সম্ভব হয়। মহিলাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় পুলিশও।
কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় ফের শুরু হয়েছিল হেরোইনের ব্যবসা। মহিলারাও নানা ভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। হুমকি আসছিল যথারীতি।
আহম্মদ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি বেপরোয়া ভাবে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে জানতে পারেন মহিলারা। খবর আসে, মঙ্গলবার তার বাড়িতে হেরোইন কিনতে খদ্দের আসছে। সেই মতো হাজির হন পাড়ার জনা ছ’য়েক মহিলা। যাঁদের উপরে চড়াও হয়ে আহম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। দুই মহিলা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহম্মদকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল মোল্লা, রহমান মোল্লারা বলেন, ‘‘হেরোইনের লাগামছাড়া কারবারের জন্য গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। মহিলারা রুখে দাঁড়ানোয় তা অনেকটা কমেছে। কিন্তু মারধরের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন আমাদের পাশে থাক, এটাই চাই।’’
আশ্বাস মিলেছে বনগাঁর এসডিপিও বিশ্বজিৎ মাহাতোর কাছে। তিনি বলেন, ‘‘জয়পুরের ওই বাড়িতে হেরোইনের কারবার চলছিল বলে আমাদের কাছে খবর ছিল না। থাকলে আগেই তৎপর হতে পারত পুলিশ। তবে মহিলাদের উপরে আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্তেরা সকলে ধরা পড়বেই। হেরোইনের বিরুদ্ধে আমাদের তল্লাশিও জারি থাকবে।’’
এলাকাটি বনগাঁ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের হিমাদ্রি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের পাশে থাকব। সব রকমের সহযোগিতা করব ওঁদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy