Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

১৪৪ ধারা দিয়ে রূপাকে রুখল পুলিশ

পাড়ুইয়ের ছায়া এ বার পিংলায়। কিছু দিন আগে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে উত্তপ্ত পাড়ুইয়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকার যুক্তিতে বিজেপি ও অন্য বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ঢুকতে বাধা দিয়েছিল বীরভূম জেলা পুলিশ। শুক্রবার ঠিক একই কায়দায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বিস্ফোরণের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ে বিজেপি-র প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দিল না পুলিশ।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মুণ্ডমারিতে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মুণ্ডমারিতে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পিংলা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

পাড়ুইয়ের ছায়া এ বার পিংলায়।

কিছু দিন আগে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে উত্তপ্ত পাড়ুইয়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকার যুক্তিতে বিজেপি ও অন্য বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ঢুকতে বাধা দিয়েছিল বীরভূম জেলা পুলিশ। শুক্রবার ঠিক একই কায়দায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বিস্ফোরণের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ে বিজেপি-র প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দিল না পুলিশ।

ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে বিস্ফোরণে জখম জহিরুদ্দিন শেখের (১৮) মৃত্যু হয়। এই নিয়ে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩। ওই বাজি কারখানা রঞ্জন মাইতি নামে এক তৃণমূল নেতার ইন্ধনে চলত বলে প্রথম থেকেই বারবার অভিযোগ উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়ের পার্বতী হেমব্রম, সনাতন টুডু, সমীর মান্ডিদের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির লোকেরা এলে রঞ্জন মাইতির আরও কুকীর্তির কথা ফাঁস হয়ে যেত। তাই পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ওদের আটকেছে।’’

এ দিন সকালে পিংলার মুণ্ডমারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে সভা করেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার, জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়েরা। পরে ব্রাহ্মণবাড়ের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। তবে গ্রাম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার আগেই, মুণ্ডমারি মোড়ে তাঁদের আটকে দেন ডেবরার সিআই সুপ্রিয় বসু। জানান, আগের দিন থেকে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই ওখানে যাওয়া যাবে না।

গত ৬ মে রাতে ব্রাহ্মণবাড়ের ওই কারখানায় বিস্ফোরণে ১২ জনের প্রাণ গিয়েছিল। বিজেপি নেতারা পুলিশের কাছে জানতে চান, দু’সপ্তাহ পরে হঠাৎ ব্রাহ্মণবাড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে কেন? পুলিশ জানায়, প্রশাসনের নির্দেশেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে ১৪৪ ধারা জারির নথি দেখতে চান বিজেপি নেতারা। পুলিশ তাঁদের তা দেখায়নি। অগত্যা জয়প্রকাশবাবু খড়্গপুরের মহকুমাশাসককে সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে ফোন করেন। তিনিও জানিয়ে দেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় ওই এলাকায় তাঁদের যেতে দেওয়া সম্ভব নয়।


দিন কয়েক আগে দলীয় কর্মীদের হাতে প্রহৃত তারকেশ্বরের তৃণমূল কর্মী

শুভ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা়ড়িতে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দীপঙ্কর দে।

জয়প্রকাশবাবুর দাবি, মুণ্ডমারিতে মোতায়েন পুলিশের কাছে ১৪৪ ধারা জারির নথি আছে বলে মহকুমাশাসক তাঁকে জানিয়েছিলেন। তাঁরা পুলিশের কাছে তা দেখতে চাইলে ডেবরার সিআই তাঁদের আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে চলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত। তিনিও জানান, পদ্ধতি মেনেই ব্রাহ্মণবাড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নথি না দেখেই এলাকা ছাড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। কেন রাতারাতি জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা? মহকুমাশাসকের বক্তব্য, ‘‘ওখানে ফের অশান্তি হতে পারে বলে গোয়েন্দা দফতর থেকে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে। তার পরেই বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’’ তবে রূপার অভিযোগ, ‘‘আমাদের আটকাতেই আগেভাগে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’’ জয়প্রকাশবাবুর দাবি, ‘‘রূপার মতো নেত্রী এলাকায় গেলে স্থানীয়েরা তাদের ক্ষোভের কথা জানাতেন। তাই ভয় পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ দিয়ে আটকেছেন।’’ বিস্ফোরণের পরে ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে যেতে গিয়ে পুলিশের কাছে বাধা পেয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রও। তাঁরও অভিযোগ ছিল, ১৪৪ ধারা জারি আছে জানিয়ে তাঁদের পথ আটকানো হলেও পুলিশ কোনও নথি দেখাতে পারেনি। ১৪৪ ধারা জারি থাকলে চার জনের বেশি এক জায়গায় জড়ো হওয়া যায় না। কিন্তু বিজেপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন মোটে তিন জন। তা-ও তাঁদের রাস্তায় আটকানো হল কেন? মহকুমাশাসকের যুক্তি, ‘‘ওঁরা তিন জন ব্রাহ্মণবাড়ে গেলে তাঁদের ঘিরে আরও তিনশো জনের জমায়েত হতে পারত। তা থেকে অশান্তির আশঙ্কাও ছিল।’’ তার মানে কি পিংলাতেও বিজেপির লোক টানার ক্ষমতা আছে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘পিংলায় ওদের কিছু নেই। মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’’ সিপিআইয়ের জেলা নেতা বিপ্লব ভট্টর টিপ্পনী, ‘‘ভয় পেয়ে তৃণমূল তো আগে পুলিশ দিয়ে আমাদের সভাও বানচাল করাতে চেয়েছিল। কিন্তু এ দিন ওরা যা করল, তাতে বিজেপি তথা রূপা গঙ্গোপাধ্যায় অযথা বাড়তি প্রচার পেয়ে গেল।’’


ব্রাহ্মণবাড়ে যেতে বাধা রূপাকে।

বিজেপি নেতারাই বা এত দিন বাদে হঠাৎ বিস্ফোরণের গ্রামে যেতে চাইলেন কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। তবে রূপার বক্তব্য, ‘‘ব্রাহ্মণবাড়ের মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছে থেকেই যেতে চেয়েছিলাম।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওঁরা পরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি চাইলে বিবেচনা করে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE