চলতি বছরের সাড়ে সাত মাসে কলকাতা হাইকোর্টে এক বারও শুনানি হয়নি মামলাটির। ২০১৩ সালেও মামলাটি এজলাসে ওঠেনি। আর ২০১২ সালে মাত্র দু’দিন মামলাটি শুনেছিল উচ্চ আদালত।
গত তিন বছরে রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুরহস্য সংক্রান্ত মামলার অগ্রগতি বলতে এইটুকুই।
অথচ ২০০৭ সালের রাজ্য তোলপাড় করা ওই ঘটনা দীর্ঘ বাম শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল। শুধু মামলার অগ্রগতিতেই মন্দা নয়, সিবিআই যে-উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে এই মামলার তদন্ত শুরু করেছিল, রীতিমতো ভাটা পড়েছে সেই উৎসাহেও। মামলাটি যাতে নিয়মিত আদালতের কর্মতালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়, তার জন্য হাইকোর্টে সিবিআইয়ের তেমন কোনও প্রচেষ্টা বা তৎপরতাও চোখে পড়েনি বলে জানাচ্ছে আইনজীবী মহল।
এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অশোক তোদির আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র জানান, হাইকোর্টে যে-মামলাটির শুনানি আটকে আছে, সেটি ওই ঘটনার আসল মামলাও নয়। আসল মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা নিম্ন আদালতে। কিন্তু সেখানে চার্জ গঠন করার পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। সেই মামলাই তিন বছরে এজলাসে উঠেছে মাত্র দু’দিন। হাইকোর্টে এই মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়ার পরে তবেই মূল মামলাটির শুনানি শুরু হবে নিম্ন আদালতে। এবং তারও পরে শুরু হবে মামলাটির শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ। বিভিন্ন আদালতে মামলার পাহাড় জমে আছে। তবু রিজ মামলা ঝুলে থাকায় আইনজীবী মহলও বিস্মিত।
২০০৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাতিপুকুরের রেললাইনের ধারে পাওয়া গিয়েছিল পার্ক সার্কাসের যুবক রিজওয়ানুরের দেহ। এক বছর পরে সিবিআই সেই ঘটনার চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিটের পরেই বেশ কয়েক বার হাইকোর্ট এবং এক বার সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হন অভিযুক্তেরা। এই কারণে চার্জ গঠনে ক্রমাগত দেরি হতে থাকে। ঘটনার চার বছর পরে, ২০১১ সালের এপ্রিলে চার্জ গঠন করে নিম্ন আদালত। তার বিরুদ্ধে আবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত দুই ভাই অশোক ও প্রদীপ তোদি, তাঁদের আত্মীয় অনিল সারোগি এবং রিজের প্রতিবেশী পাপ্পু।
শুধু ওই অভিযুক্তেরাই যে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন তা-ই নয়। চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে সিবিআই-ও হাইকোর্টে যায়। কারণ, চার্জশিটে অভিযুক্ত তিন পুলিশ অফিসার অজয় কুমার (আইপিএস), সুকান্তি চক্রবর্তী এবং কৃষ্ণেন্দু দাসের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ থাকলেও চার্জ গঠনের সময় তা বাদ দিয়ে দেয় নিম্ন আদালত। এতে সিবিআইয়ের আপত্তি ছিল। রিজের পরিবারের তরফ থেকেও হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো হয়। তাদের দাবি, এই মামলায় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় এবং আইপিএস অফিসার জ্ঞানবন্ত সিংহও জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি জানান রিজের আত্মীয়স্বজন।
কিন্তু ২০১১ সালের এই মামলাটি ২০১২ সালে বিচারপতি অহলুওয়ালিয়ার এজলাসে ওঠে মাত্র দু’দিন। তার পরে ওই বিচারপতি বদলি হন। ২০১৩ সালে মামলাটি আর এজলাসে ওঠেইনি। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে ওই মামলা দু’দিন তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও তা পরে বাদ পড়ে যায়। দীপনারায়ণবাবু বলেন, “নিয়মমতো মামলাটি ঘুরে আবার তালিকায় ঢোকার কথা।”
কিন্তু কবে?
উত্তর জানা নেই কৌঁসুলিদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy