Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধু চল! দু’বোনের বিয়ে আটকাল সহপাঠীই

চোদ্দো বছরের কিশোরের পেশির জোর নেই। অর্থের জোরও নেই। তবে কলজের জোর আছে! সেই জোরেই দুই সহপাঠিনীর বিয়ে রুখে দিয়ে তাদের নিজের ভাঙা কুঁড়েঘরে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করেনি সে।

সাবাস: সোনু-ভুতরুদের পাশে দাঁড়িয়েছে তারকেশ্বরই।

সাবাস: সোনু-ভুতরুদের পাশে দাঁড়িয়েছে তারকেশ্বরই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

চোদ্দো বছরের কিশোরের পেশির জোর নেই। অর্থের জোরও নেই। তবে কলজের জোর আছে! সেই জোরেই দুই সহপাঠিনীর বিয়ে রুখে দিয়ে তাদের নিজের ভাঙা কুঁড়েঘরে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করেনি সে।

নাম তার তারকেশ্বর রায়। স্কুল থেকেই সোজা হাত ধরে নিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছে দুই কিশোরীকে। বাড়ি মানে ভাঙাচোরা একটা কামরা। পরিবারের ছয় সদস্যের মাথা গুঁজতে হয় অতি কষ্টে। পেট ভরে খাবার জোটে না। কিন্তু সব শুনে ওই কিশোরের পরিবারও কাছে টেনে নিয়েছে অনাত্মীয় মেয়ে দু’টিকে। তারাই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আটকে দিয়েছে নাবালিকাদের বিয়ে। গত বাইশ দিন ধরে বন্ধুর বাড়িতে থেকেই স্কুলে যাচ্ছে সোনু পান্ডে এবং ভুতরু পান্ডে।

তারকেশ্বর, সোনু আর ভুতরু— তিন জনেই ধাপা-র চিনাপাড়া এলাকার একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস এইটের পড়ুয়া। মেয়ে দু’টি সহোদর বোন। বাড়ি মেহের আলি লেনে। বাবা গাড়ি চালান। রোজগার সামান্যই। আচমকাই তিনি বিয়ে ঠিক করে ফেলেন মেয়েদের। চোখে অন্ধকার দেখে ওরা। সোনুর কথায়, ‘‘ক’দিন আগে বাবা হঠাৎই মা’কে বলল আমাদের নিয়ে দেশের বাড়ি (বিহারের সিওয়ান) চলে যেতে। আমাদের বিয়ে নাকি পাকা। সারা দিন আমরা কেঁদেছি, ভয়ে কেঁপেছি। বাবা টলেনি।’’

আরও পড়ুন: আটপৌরে ঘরে খেলেন অমিত

তার পর? ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড-সংলগ্ন সরু গলির ভিতর কুঁড়েঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে বাকিটা জানাল রোগাটে কিন্তু রোখা চেহারার কিশোরটি। ‘‘আমার ছোট্টবেলার বন্ধু ওরা। দু’জনেই পড়াশোনায় ভাল। সে দিন ওরা স্কুলে এসে কেঁদে ফেলল। বিয়ের কথা বলল। এই বয়সে কেউ বিয়ে করে নাকি?’’ তারকেশ্বর ঠিক করে নিল কী করতে হবে। ‘‘আমি ওদের বললাম, স্কুল থেকে সোজা আমার সঙ্গে আমার বাড়ি চলে আসতে।’’

তারকেশ্বরের পরিবারও ফেলে দেয়নি সোনু-ভুতরুকে। তারকেশ্বরের মা সুগন্ধি দেবী বললেন, ‘‘আমারও দু’টো মেয়ে আছে। আমার মেয়েদের সঙ্গেই ওরা থাকবে। শুকনো রুটি ভাগ করে খাবে।’’ এই ভাবেই বাইশ দিন কেটে গিয়েছে। ওই বাড়ি থেকেই রোজ স্কুলে যাচ্ছে কিশোরীরা। মাঝখানে একদিন ওদের প্রাইমারি স্কুলের প্রিয় দিদিমণি অলিপিউ মণ্ডলকে সব জানিয়ে এসেছিল। তিনিই যোগাযোগ করেন চাইল্ড লাইন-এর সঙ্গে। চাইল্ড লাইনের কলকাতা কো-অর্ডিনেটর দিলীপ বসু জানিয়েছেন, রবিবার শিশু সুরক্ষা কমিশনের সামনে মেয়ে দু’টিকে আনা হবে। তার পর কোনও সরকারি হোমে রাখা হবে।

আপাতত নরম মেয়েদের বাবাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা গরিব। কম টাকায় ভাল ছেলে পেয়েছিলাম তাই বিয়ে দিচ্ছিলাম। সরকার যদি মেয়েদের হোমে রেখে পড়ায়, পড়াক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forceful Marriage Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE