নিভারানি দাস।
ঠিক যেন সিনেমা!
দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের প্রতীক্ষা! বছর তিনেক আগে মায়ের শ্রাদ্ধও করে ফেলেছিলেন ছেলেরা। অবশেষে খোঁজ মিলল সেই মায়ের। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ছেলেদের। কলকাতার এক হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছেন তাঁরা। সত্তর পার করা বৃদ্ধাও চিনেছেন ছেলেদের। এখন শুধু ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুর সদরবাজারে ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরা সংসার ছিল মণীন্দ্রচন্দ্র দাসের। নিভারানি তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তবে তাঁদের মা যে মাঝেমধ্যেই ভুলে যেতেন, তা এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারেন ছেলেরা। বাড়ি থেকে বেড়িয়েও পড়তেন তিনি। কখনও নিজেই ফিরে আসতেন, কখনও বা বাড়ির লোকেরাই খুঁজে আনতেন তাঁকে।
সালটা ছিল সম্ভবত ১৯৮৩। নিভারানিদেবীর ছেলে অক্ষয়বাবু বলেন, ‘‘সে বারেও মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিস্তর খোঁজাখুজি করি। কিন্তু কোথাও মা-কে খুঁজে পাইনি। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতেও মায়ের খোঁজ করেছিলাম।’’ আর এক ছেলে স্বপনবাবু জানান, সে বছরই পাড়ার এক জন জানান, ব্যারাকপুরের এক জায়গায় মা-কে দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। সেখানকার লোকজন জানান, এক মহিলা কিছুক্ষণ আগে সেখান থেকে চলে গিয়েছেন।’’
পরিজনেরা জানান, এর পরে আরও এক বার স্থানীয় এক আশ্রমে নিভারানিদেবী রয়েছেন বলে শুনতে পান তাঁরা। যথারীতি সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। ব্যস, খোঁজাখুজির সেই শেষ। নিভারানিদেবীর আর কোনও খবর আসেনি। অক্ষয়বাবু জানান, বছর তিনেক আগে তাঁর এক ভাইঝির বিয়ে হয়। পুরোহিতের পরামর্শ মতো তার আগে নিভারানিদেবীর শ্রাদ্ধ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পরিবারের কাছে তিনি মৃতই ছিলেন। মানুষটা যে এক দিন সংসারে ছিলেন, সাড়ে তিন দশকে সেটা ভুলতেই বসেছিলেন পরিজনেরা। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা তো জানেই না, ঠাম্মা কেমন ছিলেন। অক্ষয়বাবু জানান, অনেক খোঁজাখুঁজির পরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী ওই দিন বিকেলে তাঁদের বাড়িতে হাজির হন। জানান, বেঁচে রয়েছেন নিভারানি দাস। তিনি বাঘা যতীন হাসপাতালে ভর্তি। ছবিও দেখানো হয় তাঁদের। অক্ষয়বাবু বলেন, ‘‘ছবি দেখে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। বয়স হয়েছে তো! ভাইয়েরা গিয়ে মা-কে চিনতে পেরেছেন। মা-ও তাঁর ছেলেদের ঠিক চিনে নিয়েছেন। তবে মুহূর্তেই ভুলে যাচ্ছেন সব।’’
পরিচয়হীন মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির এক কর্মী জানালেন, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ নেতাজিনগর থানার পুলিশ রাস্তার ধার থেকে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে বাঘা যতীন হাসপাতালে ভর্তি করে। সুস্থ হতে তিনিই জানান, বাড়ির ঠিকানা, ছেলেদের নাম।
চিকিৎসক জানান, অ্যালঝাইমার্সের জন্যই এমন গোলমাল। কিন্তু এত বছর কোথায় ছিলেন তিনি? স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের অনুমান, কোনও বাড়িতে সর্বক্ষণের পরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। কোথায়? তা-ও মনে করতে পারেননি বৃদ্ধা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy