Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গুরুঙ্গের বাড়ির সামনে ছাগমুণ্ড

সোমবার সকালে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের মানুষের মধ্যে এই নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা শুরু হয়, কীর্তিটা কার!

বিমল গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র।

বিমল গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

অনেক দিনই নিজের ঘরছাড়া বিমল গুরুঙ্গ। এর মধ্যে পাতলেবাসে তাঁর বাড়িতে চুরিও হয়েছে। এ বারে সেই বাড়ি লাগোয়া গুরুঙ্গের নিজস্ব অফিসের সামনে দেখা মিলল কালো কাপড় মোড়া একটি ভয়াল মুখোশের, যার গলায় ঝোলানো ছাগলের মুণ্ড।

সোমবার সকালে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের মানুষের মধ্যে এই নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা শুরু হয়, কীর্তিটা কার! কেউ বলেন, ‘শত্রু বিতাড়নে’ গুরুঙ্গের বিরোধী পক্ষ এই কাণ্ড করে গিয়েছে। আবার অন্য পক্ষের দাবি, ‘শত্রু’র তাড়ায় বাড়ি ছাড়া হওয়ার পরে সেখানে ফিরে আসতে চাইলে এমন ‘কালা জাদু’ করার প্রথা বা রেওয়াজ রয়েছে। ঘটনাটি জানার পরে দার্জিলিং জেলা পুলিশ বিষয়টির উপরে নজর রাখছে। জেলা গোয়েন্দাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে এই নিয়ে কোনও অভিযোগ না হওয়ায় তারা আগ বাড়িয়ে কিছু না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হঠাৎ ছাগমুণ্ড ঝোলানো হল কেন? পাহাড়ের অনেকেই বলছেন, ছাগমুণ্ড ঝুলিয়ে শত্রুনাশের জন্য যাগযজ্ঞের ঘটনা পাহাড়ে নতুন নয়। ভুটান-সিকিমের মতো দার্জিলিং পাহাড়েও নানা তুকতাক, তন্ত্রসাধনার চর্চার চল আছে। এই ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগেও জাদু বিশ্বাসীরা মনে করেন, বাড়ির সামনে ছাগমুণ্ড ঝুলিয়ে অনেক অশুভ শক্তি কাটানো যায়।

পুরাণ মতে, স্ত্রী সতীর মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রচণ্ড রাগে শিব শ্বশুর দক্ষের যজ্ঞস্থল লণ্ডভণ্ড করে দেন। তাঁর হাতে দক্ষেরও মাথা কাটা যায়। তখন দক্ষের স্ত্রী এসে শিবের কাছে মিনতি করেন। সেই অনুনয়ে মন গলে মহাদেবের। তাঁর নির্দেশ মতো নন্দী একটি ছাগলের মাথা কেটে এনে দক্ষের কাঁধে স্থাপন করে। দক্ষ ছাগমুণ্ড হয়েই এর পরে পরিচিত হন।

কিন্তু গুরুঙ্গের অফিসের সামনে কেন দক্ষের প্রতীক তৈরির প্রয়োজন হল, তা নিয়ে নিশ্চিত নন পাহাড়বাসী। তাঁরা বেশির ভাগই এর মধ্যে পাহাড়ে যুযুধান দু’পক্ষের লড়াইয়ের গন্ধ পাচ্ছেন। প্রায় ছ’মাস লুকিয়ে থাকার পরে সম্প্রতি গুরুঙ্গ দিল্লিতে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তার পরে গোর্খাল্যান্ড নিয়েও মুখর হয়েছেন। উল্টো দিকে, বিনয় তামাঙ্গরাও বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যিনি পাহাড় ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁর পক্ষে ফেরা কঠিন। তাই, এই ছাগমুণ্ড মূর্তি গুরুঙ্গকে দূরে রাখতে, নাকি তাঁর পাহাড়ে ফেরার পথ পরিষ্কার করতে তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রবল ধন্দে ভুগছে পাহাড়। তুঙ্গে উঠেছে জল্পনাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE