—ফাইল চিত্র।
মৈত্রী এক্সপ্রেসের শৌচাগারে পিছু ধাওয়া করে বন্দুক উঁচিয়ে এক বাংলাদেশি মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে। ধস্তাধস্তিতে পড়ে গিয়ে মহিলা জখমও হয়েছেন।
বাংলাদেশগামী ট্রেনটি সোমবার নদিয়ার গেদে স্টেশনে থামলে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান মহিলার স্বামী। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৯৯ নম্বর ব্যাটালিয়ানের ২০ জন জওয়ান ট্রেনে পাহারায় ছিলেন। ডিআইজি (বিএসএফ) আর পি এস জায়সবাল কারও নাম না করে শুধু বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হচ্ছে।’’ বিকেলে দমদম জিআরপি মামলাটি হাতে নেয়।
রেলপুলিশ সূত্রে জানা যায়, দমদম থেকে ব্যারাকপুর স্টেশনের মাঝে ঘটনাটি ঘটে। গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা থেকে কলকাতায় বেড়াতে এসেছিল পরিবারটি। এ দিন তাঁরা ফিরছিলেন। সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়েছিল ট্রেনটি। ফার্স্ট ক্লাস এসি কামরায় (এ-১) যাচ্ছিলেন ওই মহিলা, তাঁর স্বামী, সন্তান ও দেওর। ট্রেন দমদম স্টেশন ছাড়ানোর পরে মহিলা উঠে শৌচাগারে যান।
মহিলার স্বামীর অভিযোগ, তখনই তাঁর পিছু ধাওয়া করে কর্তব্যরত এক জওয়ান। মহিলা বাধা দিলে সে বন্দুক উঁচিয়ে ভয় দেখায়। ধস্তাধস্তিতে পড়ে গিয়ে তাঁর হাঁটুতে চোট লাগে। খুলে পড়ে যায় নাকফুল। কোনও রকমে জওয়ানের হাত ছাড়িয়ে আসনে ফিরে তিনি স্বামীকে সব বলেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ভ্রাম্যমান টিকিট পরীক্ষক পি কে তরফদারকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয়।
সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মৈত্রী এক্সপ্রেস গেদে স্টেশনে দাঁড়াতেই ওই মহিলা ও তাঁর পরিবারের লোকজন নেমে স্টেশন ম্যানাজারের ঘরে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অন্য যাত্রীরাও। তাঁরা স্টেশন ম্যানেজার শান্তাপ্রসাদ সিংহকে গোটা বিষয়টি জানান। টিকিট পরীক্ষকও তাঁর হাতে থাকা লিখিত অভিযোগ জমা দেন। রেলের তরফে রেলপুলিশ ও অভিবাসন দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়। বিএসএফ কর্তাদেরও খবর দেওয়া হয়।
বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশের এক মহিলাকে তল্লাশির অছিলায় দফতরে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছেল মাজদিয়ার শুল্ক কর্মীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বার বাংলাদেশ সীমান্তে প্রহরার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ-এর বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে কর্তারা। রেল সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে পর্যন্তও রেলপুলিশ এবং রেলরক্ষী বাহিনী (আরপিএফ) মৈত্রী এক্সপ্রেসে পাহারার দায়িত্বে ছিল। গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিএসএফ ট্রেনটি পাহারা দেবে। এই ঘটনায় সেই সিদ্ধান্তও প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।
প্রশ্ন রয়েছে টিকিট পরীক্ষকের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ পাওয়া মাত্র কেন তিনি পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে তদন্ত শুরু করালেন না, প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সীমান্তবর্তী স্টেশন গেদে পৌঁছনোর অপেক্ষা কেন করলেন, তা রেলপুলিশের বোধগম্য হচ্ছে না।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে মহিলা যাত্রীকে নিগ্রহের অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ট্রেন হওয়ায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকে। গেদের আগে দাঁড় করানো সম্ভব ছিল না।’’
সহ প্রতিবেদন: সুরবেক বিশ্বাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy