স্বস্তি: সফল অস্ত্রোপচারের পর স্ত্রীর সঙ্গে ঘন্টেশ্বর। —নিজস্ব চিত্র।
ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই তিনি দিন কাটান। কিন্তু রোগ বাধিয়েছিলেন ১২ লাখ টাকার!
অথৈ জলে পড়েছিলেন হাওড়ার বাগনানের ওড়ফুলির দিনমজুর ঘণ্টেশ্বর পাল। তাঁকে টেনে তুললেন এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসক প্রদীপ ঘোষাল। আমেরিকা থেকে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা দামের বিশেষ ধরনের পেসমেকার আনিয়ে, নিখরচায় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে জীবনের ছন্দে ফিরিয়ে দিলেন বছর ছেচল্লিশের ওই দিনমজুরকে।
কী হয়েছিল ঘণ্টেশ্বরবাবুর?
চিকিৎসার পরিভাষায় ‘হার্ট প্যারালিসিস’। অর্থাৎ, হৃদযন্ত্রে পক্ষাঘাত। চিকিৎসকদের কাছে অন্যতম এক বিরল রোগ। বছর দুয়েক ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন ঘণ্টেশ্বরবাবু। মাস সাতেক আগে উলুবেড়িয়ায় নিজস্ব চেম্বারে তাঁকে দেখেন এনআরএসের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রদীপবাবু। ওষুধে ঘণ্টেশ্বরবাবুর শ্বাসকষ্ট না-সারায় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন প্রদীপবাবু। তার পরেই তাঁর ‘লড়াই’ শুরু।
কেমন সে ‘লড়াই’? ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পড়াশোনা এবং খোঁজখবর করে জানলাম, হৃদযন্ত্রের তিনটি চেম্বারে যদি বিশেষ ধরনের পেসমেকার (কার্ডিয়াক রিসিনক্রোনাইজেশন থেরাপি) বসানো যায়, তা হলে রোগী সুস্থ হবেন। না হলে মৃত্যু নিশ্চিত।’’
আরও পড়ুন: নবান্ন-সৈনিকের মৃত্যু, পুলিশি হুমকিতে বিতর্ক
কিন্তু এ দেশে ওই পেসমেকার মেলে না। মেলে আমেরিকায়। দাম প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। সেই টাকা দেবে কে? অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে তদ্বির করে টাকার জোগাড় করেন প্রদীপবাবুই। তিনিই যন্ত্রটি আনানোর ব্যবস্থা করেন। তার পরে ১০ এপ্রিল এনআরএস হাসপাতালে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে সেই যন্ত্র ঘণ্টেশ্বরবাবুর বুকে বসিয়ে দেন প্রদীপবাবু। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্যই শুধু খরচ হয় সাড়ে চার লক্ষ টাকা। সেটাও নিখরচায় হয়েছে ঘণ্টেশ্বরবাবুর।
সফল অস্ত্রোপচারের পরে খুশি প্রদীপবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যভবনকে এই অসুখের গুরুত্ব এবং যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে আমার কালঘাম ছুটে গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার-সহ সকলে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। এক জন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। আমার জেদ চেপে গিয়েছিল। দীর্ঘ চাকরি জীবনে এমন অস্ত্রোপচার প্রথম করলাম।’’
এখন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছেন ঘণ্টেশ্বরবাবু। তাঁর টালির চালের ঘরে স্বস্তি ফিরেছে। ঘণ্টেশ্বরবাবু বলছেন, ‘‘প্রদীপবাবু ভগবান। উনি না থাকলে মরেই যেতাম। আমার খরচ হয়েছে শুধু যাতায়াতের গাড়ি-ভাড়াটুকু। এমনটা আজকাল কে করে!’’
রাজ্যের নানা প্রান্তে মাঝেমধ্যেই চিকিৎসকদের ‘অমানবিক মুখ’-এর কথা শুনেছেন ওই দিনমজুর। সেখানে এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তাতে এখনও তাঁর ঘোর কাটছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy