Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বাসের দিশা ডাক্তারদের

শৌচাগারে ঢুকে ছিটকিনি তুলে দিয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন তিনি। সে দিন তাঁর মনে হয়েছিল, হাতের কাছে অন্তত একটা হকি স্টিক থাকলে হয়তো কিছুটা নিরাপদ বোধ করতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩০
Share: Save:

অতীতের কথা শোনাতে গিয়ে এত দিন পরেও মুখেচোখে আতঙ্ক ফুটে উঠছিল চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের। ট্রাকভর্তি উন্মত্ত জনতা হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিল চিকিৎসকদের মারবে বলে। শৌচাগারে ঢুকে ছিটকিনি তুলে দিয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন তিনি। সে দিন তাঁর মনে হয়েছিল, হাতের কাছে অন্তত একটা হকি স্টিক থাকলে হয়তো কিছুটা নিরাপদ বোধ করতেন।

এখন চিকিৎসকদের উপর হামলা আরও বেড়েছে। পূর্ণেন্দুবাবু নিজেই বললেন, ‘‘এখন আমার ওটি-তে ২০ জনের একটা টিম তৈরি করেছি। ওদের সবার হকি স্টিক রয়েছে। কেউ হামলা করলে ওরা পাল্টা ভয় দেখিয়ে আত্মরক্ষা তো করতে পারবে!’’

তাঁর কথা শুনে কেউ সহমত হলেন, কেউ আবার মাথা নাড়লেন। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই রকম একটি পরিস্থিতি তাঁদের কাম্য নয়।

পরস্পরবিরোধী মত, তর্কাতর্কি হর্ষ-ক্ষোভ— যে কোনও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথার সময় যা-যা হওয়া প্রত্যাশিত, সেই সবই দেখা গেল শনিবার চিকিৎসক দিবসে ‘বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর চিকিৎসা সংক্রান্ত সাব কমিটি আয়োজিত আলোচনাসভায়। আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল, ‘বিশ্বাস— স্বাস্থ্য পরিষেবার মূলধন।’

যখন অর্জুন দাশগুপ্ত-র মতো চিকিৎসক বলেছেন, ‘‘হামলা মানে চিকিৎসকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। সেই ভাবনাটা মানুষের আসে কী করে? কই অন্য কোনও পেশার লোকেদের উপর তো সেটা করা হয় না।’’ তখনই আবার সত্যজিৎ বসু-র মতো চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন, ‘‘চিকিৎসক-রোগীর ভিতর স্বচ্ছ্বতার বড় অভাব। সেখান থেকেই অবিশ্বাস জন্ম নেয়। মানুষ তার ক্ষোভ প্রকাশ করতে না পেরে হিংসার আশ্রয় নেয়।’’

শ্রোতাদের মধ্যে থেকে কেউ মন্তব্য করলেন, চিকিৎসকদের ঈশ্বরের আসন দেওয়া হয়, তাই তাঁদের বিচ্যুতি ঘটলে মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক। তখনই যেন সভায় একটা আলোড়ন উঠল। অনেক চিকিৎসকই গলা চড়িয়ে বললেন, ‘‘আমরা ঈশ্বর হতে চাই না। আমরাও মানুষ আর মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। সেটা মানতে হবে।’’ ভুল না করেও অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে বলে এর পরই দাবি করলেন চিকিৎসক রেজাউল করিম। সংযোজক ইন্দ্রজিৎ সর্দারের উক্তি, ‘‘চিকিৎসকেরাই যেহেতু স্বাস্থ্য পরিষেবার মুখ, তাই যাবতীয় না-পাওয়ার ক্ষোভ এসে পড়ে চিকিৎসকদের উপর।’’

আলোচনাশেষে কতকগুলি বিষয়ে একমত হলেন উপস্থিত জনেরা। বিষয়গুলি উত্থাপন করলেন অন্যতম সংযোজক, চিকিৎসক অমিত ঘোষ। সরকারি হাসপাতালগুলিকে আরও উন্নত করলে এবং সেখানে চিকিৎসকেরা আরও সময় দিলে বেসরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরতা কমবে। চিকিৎসকদের আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে। মেডিক্যাল পাঠ্যক্রমে চিকিৎসকদের আচরণবিধি ঢোকাতে হবে। রোগীদেরও বুঝতে হবে কোন বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বহন করা তাঁর পক্ষে সহজ হবে। এবং সবশেষে ডাক্তারির ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে।

বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার পথ খোঁজার দিশা দেখিয়ে শেষ হল অনুষ্ঠান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Faith Meeting ডাক্তার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE