Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নীরব বুদ্ধ, তারুণ্যের পক্ষে ব্যাট গৌতমের

কয়েক দিন আগেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে বিরুদ্ধ মতের মোকাবিলা করে সিটুর রাজ্য সভাপতি পদে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নামে সম্মতি আদায় করে ছেড়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০৩:১৯
Share: Save:

রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে দলের মধ্যে তাঁর নাম শুনে চমকে উঠেছিলেন অনেকে। প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও তরুণ মুখকে প্রার্থী করতে সে দিন অনড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিন বছর পরে সেই তরুণ সাংসদকে যখন ব্যক্তিগত জীবন এবং সংবাদমাধ্যমে খবর ফাঁস করা সংক্রান্ত অভিযোগে সাসপেন্ড করছে দল, তিনি একেবারে নীরব!

আর অশক্ত শরীরে দলের সব বৈঠকে যিনি আজকাল থাকতে পারেন না, তিনিই প্রবল পরাক্রমে নেমেছিলেন তড়িঘড়ি শাস্তির বিরোধিতা করতে। কয়েক দিন আগেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে বিরুদ্ধ মতের মোকাবিলা করে সিটুর রাজ্য সভাপতি পদে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নামে সম্মতি আদায় করে ছেড়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। এ বার ঋতব্রত-কাণ্ডেও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে নিয়ে পাল্টা যুক্তি সাজাতে নেমেছিলেন গৌতমবাবু। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য কমিটির সব ক’জন সদস্য তাই শাস্তি ঘোষণার দিন দাঁড়িয়ে মুখ খুলেছেন। প্রকাশ্যে তাঁর মন্তব্য ঘিরে মাঝে মাঝে যতই বিতর্ক হোক, এমন ঘটনার পরে সিপিএমের অন্দরে তরুণ প্রজন্মের ‘অভিভাবক নেতা’ হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে গৌতমবাবুর।

তরুণ সহকর্মীদের এগিয়ে দিতে এবং আগলাতে গৌতমবাবুর ভূমিকা নিয়ে দলে যখন চর্চা হচ্ছে, তখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর উদাসীনতাও অবাক করেছে অনেককে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও আলিমুদ্দিনে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা হয় নিয়মিত। কিন্তু ঘরোয়া ভাবেও বুদ্ধবাবুকে এই বিষয়ে তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে সিপিএম সূত্রের খবর। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘বুদ্ধদা’র মতো নেতার প্রশ্রয়ে ঋতব্রতেরা বিগড়ে যাচ্ছে বলে একটা প্রচার আছে। হতে পারে, ওঁর মনে হয়েছে এই সময়ে পাল্টা যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে!’’

গৌতমবাবু অবশ্য এ সবের ধার ধারেননি। কমিশনের কাছে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঠিয়েই আবার সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড কেন, তা নিয়ে দলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তা ছ়়াড়া, সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠিক কী, রাজ্য কমিটিতে তা খোলসা করে না জানানো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গৌতমবাবুর অনুগামী নেতারা উদাহরণ দিচ্ছেন, কেরলের মতো কট্টরপন্থী সিপিএম সে রাজ্যের বিধায়ক কে ইউ অরুণনকে শুধু প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছে আরএসএসের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। তা হলে ঋতব্রত-কাণ্ডে এত তাড়া কেন? গৌতমবাবু, সুজনবাবুদের পাশে ছিলেন বিমান বসু ও অমিয় পাত্রও।

দলের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। যা নিয়ে আবার প্রসেনজিৎ বসুর মতো প্রাক্তন সিপিএম নেতার প্রশ্ন, কোনও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কারও অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা আর ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ থাকে কী করে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

গৌতম দেব Gautam Deb CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE