Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রযুক্তির ফাঁকেই অশান্তির নকশা

ইলামবাজারের যুবককে জেলে থাকতে হয়েছিল। বসিরহাটে বিতর্কিত গ্রাফিক্স দেখা যায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ফেসবুক ওয়ালে।পুলিশি হেফাজতে সেই ছাত্রের দাবি, ওই গ্রাফিক্স তিনি তৈরি করেননি। এবং তিনি সেটি পোস্টও করেননি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

গত তিন বছরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে বারবার সামনে এসেছে নামগুলো। দেগঙ্গা, নুলিয়াখালি, সোনাখালি, বাসন্তী, কালিয়াচক, মল্লারপুর, ইলামবাজার, ধূলাগড়, নন্দীগ্রাম, বসিরহাট। আপাত শান্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকেই কেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তা নিয়ে নিয়মিত তদন্ত করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী। তাতেই দেখা গিয়েছে, অন্তত চার-পাঁচ জায়গায় অশান্তি ছড়ানো হয়েছে একই কায়দায়— ফেসবুকের মাধ্যমে। কিন্তু প্রযুক্তির প্রতিবন্ধকতায় অধরা থেকে গিয়েছে মূল ষড়যন্ত্রীরা। ফলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের সমস্যার কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে দিশাহারা প্রশাসন।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট নকশা মেনে প্রথমে ফেসবুকে অবমাননাকর কোনও লেখা বা ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়। মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘কেউ একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু একটা লিখে দিচ্ছে। আর শুরু হয়ে যাচ্ছে। কত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করব? এটা কি সম্ভব? তা বলে রাস্তায় নেমে গোলমাল পাকাতে হবে?’’

স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ইলামবাজার, নন্দীগ্রাম এবং বসিরহাটে ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই গোলমাল শুরু হয়। তিনটি ক্ষেত্রেই যাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে বিতর্কিত পোস্ট হয়েছিল, তাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ওই তিন ব্যক্তির বাড়ি ভাঙচুর হয়, গোলমালও বেড়ে যায়। নন্দীগ্রামে যে যুবক ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন বলে অভিযোগ, তিনি পুলিশের মার খেয়ে মাসখানেক হাসপাতালে ছিলেন। ইলামবাজারের যুবককে জেলে থাকতে হয়েছিল। বসিরহাটে বিতর্কিত গ্রাফিক্স দেখা যায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ফেসবুক ওয়ালে। পুলিশি হেফাজতে সেই ছাত্রের দাবি, ওই গ্রাফিক্স তিনি তৈরি করেননি। এবং তিনি সেটি পোস্টও করেননি।

তা হলে কে রয়েছে নেপথ্যে? ওই গ্রাফিক্সের উৎসই বা কোথায়?

গোয়েন্দাদের অভিযোগ, আইনি জটিলতা এবং সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় এখানেই বারবার আটকে যেতে হয় তাঁদের। ফলে যাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে এই ধরনের পোস্ট দেখা যায়, তাদের ধরেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পুলিশকে। নন্দীগ্রাম, ইলামবাজার, ধূলাগড়, কালিয়াচকেও একই ঘটনা ঘটেছিল। বসিরহাটেও একই চ্যালেঞ্জ। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীই এই কাজ করছে। কিন্তু তাদের কাউকে ধরা যায়নি।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ সব ক্ষেত্রে মূল চক্রীকে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেঞ্জার সংস্থার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে সেই আবেদন জানাতে হয়। অথচ এর পরেও সংস্থাগুলি ওই সব পোস্ট কোথা থেকে করা হয়েছে, হয় তা জানায় না। অথবা দেরি করে জানায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘আইপি অ্যাড্রেস’ কিংবা সার্ভারটি রয়েছে বিদেশে। ফলে রাজ্যের পুলিশ বা গোয়েন্দাদের কিছুই করার থাকে না।

এক কর্তার কথায়,‘‘পাহাড়ে সম্প্রতি সামরিক পোশাক পরা গোর্খাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে আসার পরে বিতর্ক হয়েছিল। তদন্তে জানা যায়, ওই গোর্খা যুবক আদৌ সেনাবাহিনীতে নেই। সে বাইরে কোথাও নিরাপত্তার কাজ করে। ফেসবুকে তার ভিডিওটি নেপালের মোরাঙ্গ থেকে আপলোড করা হয়েছিল। এর পরে রাজ্য পুলিশ কি নেপালে গিয়ে তদন্ত করবে?’’ গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে অশান্তি ছড়াতে এই কায়দাই নেওয়া হচ্ছে। উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বিদেশি সার্ভার বা আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে। তাই মূল ষড়যন্ত্রীরা থেকে যাচ্ছে অধরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE