Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাঘ নয় বকরি, শুভেন্দুকে কটাক্ষ অধীরের

এর আগে তাঁর উত্থানভূমি নন্দীগ্রামে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ বার ‘অধিকারী সাম্রাজ্যের খাসতালুক’ কাঁথিতে এসেও সেই শুভেন্দু অধিকারীকেই নিশানা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

কাঁথিতে কংগ্রেসের কর্মিসভায় অধীর। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।

কাঁথিতে কংগ্রেসের কর্মিসভায় অধীর। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

এর আগে তাঁর উত্থানভূমি নন্দীগ্রামে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ বার ‘অধিকারী সাম্রাজ্যের খাসতালুক’ কাঁথিতে এসেও সেই শুভেন্দু অধিকারীকেই নিশানা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

গত কয়েক মাস ধরেই তমলুকের তৃণমূল সাংসদ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির তরজা চলছে। একে অন্যের গড়ে গিয়ে পরস্পরকে বিঁধছেন। কখনও মুশির্দাবাদে গিয়ে শুভেন্দু বলছেন, ‘অধীর আগে তরমুজের ভূমিকা পালন করতেন, এখন পুরোটাই লাল’, আবার নন্দীগ্রামে এসে অধীর বলছেন, ‘আগে পুলিশ অফিসারেরা মুর্শিদাবাদে গেলে তাঁদের পদোন্নতি হত। কিন্তু এখন তৃণমূলের কোনও নেতা মুর্শিদাবাদে গেলে তাঁদের ‘ডিমোশন’ হচ্ছে। ছিলেন সাংসদ। এখন তাঁকে এখান (নন্দীগ্রাম) থেকে বিধায়ক করা হবে।’

সেই ধারা বজায় রেখেই কাঁথির রবিবাসরীয় কর্মিসভায় অধীর অভিযোগ করেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে আমার সাহায্যে রাহুল গাঁধীর কাছে গিয়েছিলেন। দিদি তৃণমূলে স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছেন বলে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। তৃণমূল ছাড়লে তাঁকে দিদি ফাঁসিয়ে দেবেন বলে শঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। সে দিন তাঁকে বাঘ মনে হলেও কাঁথিতে সারদা এনক্লেভ তৈরির পেছনের রহস্য সামনে আসায় আজ মনে হচ্ছে সে দিনের বাঘ আসলে বাঘের খোলসে মোড়া বাজারের বকরি (ছাগল)।”

৫৩ মিনিটের বক্তব্যে বারবারই শুভেন্দু ও তাঁরা বাবা সাংসদ শিশির অধিকারীকে কটাক্ষ করেছেন অধীর। শিল্পায়ন প্রশ্নে তাঁদের বিঁধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘পিতা-পুত্র দিঘা আর হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মাথায় বসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কটা শিল্প গড়তে পেরেছেন? কটা কারখানা তৈরি হয়েছে? কত জনকে চাকরি দিতে পেরেছেন?’’ অধীরের মতে, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাই এখনও অনুন্নত। তাই কেন্দ্রীয় সরকার অনুন্নত জেলা হিসেবে এখানে উন্নয়নের টাকা পাঠায়।

মুর্শিদাবাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার পরে অধীর ‘গড়ে’ আঘাত হেনেছেন শুভেন্দু। কংগ্রেসের দখলে থাকা কান্দির পুরবোর্ড হাতছাড়া হওয়ার মুখে। দলবদলের জেরে বেড়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসনসংখ্যাও। গ্রাম পঞ্চায়েত চার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০, পঞ্চায়েত সমিতি এক থেকে বেড়ে সাতটি। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে এক জনের পরিবর্তে সদস্য সংখ্যা এখন ১২। জেলা পরিষদ দখলেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। এই পরিস্থিতিতে অধীর প্রথমে নন্দীগ্রামে, তারপর এ দিন কাঁথিতে শুভেন্দুকেই পাল্টা বিঁধলেন বলে মনে করছেন জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।

শুভেন্দু অবশ্য এ সবে আমল দিচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত ছ’মাস ধরেই তো আমার নামে নানা কথা বলছেন অধীর চৌধুরী। নতুন করে এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশিরবাবুও।

কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের সংহতি হলে আয়োজিত কাঁথি-১ ব্লক কংগ্রেসের কর্মী সন্মেলনে এ দিন এসেছিলেন অধীর। দীর্ঘ ১৪ বছর পরে কোনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কাঁথির মাটিতে পা রাখলেন। অধীর এ দিন অভিযোগ করেন, ‘মোদী-দিদি’ জোট তৈরির চেষ্টা চলছে। আর বাম-কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, “রাজ্যের মানুষের কথা দিল্লিতে রাহুল গাঁধী-সহ দলের হাইকমান্ডকে জানিয়ে এসেছি। তাঁরা জোট নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার ভিত্তিতেই কংগ্রেস বিধানসভায় লড়াই করবে।’’ দলের সংগঠন মজবুত করতেই কংগ্রেস কর্মীদের আহ্বান জানান প্রদেশ সভাপতি। কর্মিসভায় ছিলেন প্রদেশ নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি নিরঞ্জন রায়, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি আনোয়ার আলি প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন কাঁথি-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি এরশাদ আলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE