Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রসগোল্লা খাওয়াতে ভালবাসতেন মধুবাবু

রবিবার দুপুরে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী গিয়েছিলেন প্রয়াত বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের নোয়াপাড়ার বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন তাপস মজুমদার, বিপুল ঘোষালের মতো জেলা কংগ্রেসের নেতারা।

আশ্বাস: নমিতাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন অধীর চৌধুরী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

আশ্বাস: নমিতাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন অধীর চৌধুরী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

সকাল থেকেই বাড়ি ভর্তি লোকজন। কংগ্রেস নেতা কর্মীদের ভিড়। আর আলোকচিত্রীদের ফ্ল্যাশের ঝলকানি।

রবিবার দুপুরে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী গিয়েছিলেন প্রয়াত বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের নোয়াপাড়ার বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন তাপস মজুমদার, বিপুল ঘোষালের মতো জেলা কংগ্রেসের নেতারা।

এক চিলতে ছোট্ট ঘরে মধুবাবুর ছবিতে মালা দিতে গিয়ে চোখের কোন চিকচিক করছিল অধীরবাবুর। নিজেকে সামলে নিয়ে সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘যা প্রশ্ন করার তাড়াতাড়ি করুন। মধুদা চলে যাওয়ায় দলের কতটা ক্ষতি হল বড় কথা নয়, এ রাজ্যের ক্ষতি হল। বাংলার রাজনীতির ক্ষতি হল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মধুদার ব্যক্তিত্বর কিছুটা অনুকরণ করতে পারলেও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলা গড়তে পারব আমরা।’’ অধীরবাবুর কথা শুনতে দশ বাই দশের ঘুপচি ঘরে তখন থিকথিকে ভিড়।

তার মধ্যেই সাদা প্লেটে রসগোল্লা সাজিয়ে অধীরবাবুদের সামনে দিলেন নমিতা ঘোষ। জনে জনে ডেকে ডেকে বলছেন, ‘‘দাদা রসগোল্লা খাওয়াতে খুব ভালবাসতেন। এত মানুষ দেখলে দাদা খুশি হতেন।’’ নোয়াপাড়ার প্রয়াত বিধায়ক মধুসূদনবাবুর বোন নমিতাদেবী।

কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না মধুবাবুর। তাঁকে প্রয়োজন শুনলেই এক পায়ে খাড়া থাকতেন। নোয়াপাড়াবাসীর পাশে থাকাই ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। মধুবাবু হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়ে পাড়ার মন্দিরে মানত করেছিলেন তৃণমূল কর্মী সুজাতা রায়। ১৭ জুলাই থেকে টানা এক মাস প্রতিদিন নিয়ম করে মধুবাবুর খোঁজ নিয়েছেন বিজেপি কর্মী রাজীব সেনও।

ইন্দিরা গাঁধী যাঁকে নামে চিনতেন, অজিত পাঁজার মতো কংগ্রেস নেতা শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে যাঁর উপর সবথেকে বেশি ভরসা করতেন সেই মধুবাবুর পছন্দ ছিল খেটে খাওয়া লোকজন। ভর দুপুরে বাড়িতে কেউ গেলে না খাইয়ে ছাড়তেন না। নিজের ভাঙা চোরা ঘরের পলেস্তারা খসা দেওয়াল জুড়ে হাত প্রতীকের পোস্টারের মালা। ওই দেখিয়ে বলতেন, ‘‘এ শুধু ইন্দিরার হাত নয়, অন্নপূর্ণারও হাত।’’ খাবারে লাউ কুমড়োর তরকারি আর সস্তা চালের ভাত জুটতো অতিথিদেরও। শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘মাটির মানুষ ছিলেন।’’

এ দিন অবশ্য এই মাটির মানুষের ঘরেই দল মত নির্বিশেষে লোক ভিড় করেছেন। নমিতাদেবীর ভবিষ্যত কি হবে? কি ভাবে চলবে তাঁর একার সংসার তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতারা। অধীরবাবু চলে যাওয়ার পরেই সেখানে গিয়েছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও রাজ্য সভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘মধুবাবু তাঁর কাজে সবার মনে জীবিত থাকবেন। আমরা বিধানসভায় ওঁনার পেনশনের বিষয়ে কথা বলছি। তা ছাড়া একটা ফান্ড করব তাঁর নামে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE