ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী স্কুলের মাঠে চলছে জঙ্গলমহল উৎসবের প্রস্তুতি। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
পর্যটনের ভরা মরসুমে ঝাড়গ্রাম শহরে হবে জঙ্গলমহল উত্সব। অথচ ইচ্ছে থাকলেও ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি সেই উত্সবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না অনেক পর্যটক! কারণ ওই সময় ঝাড়গ্রাম শহরের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালাগুলির দখল
নেবে প্রশাসন।
ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট লজ ও হোটেল কর্তৃপক্ষকে রিক্যুইজিশন-চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের বেশ কিছু অগ্রিম বুকিং বাতিল করতে হবে লজ-হোটেলগুলিকে। শহরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি লজ-হোটেল ও অতিথিশালা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ টিতে পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে। ওই দশটির মধ্যে আটটি নিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন। এর মধ্যে দু’টি সরকারি পর্যটক-অতিথিশালা। এছাড়া একটি ধর্মশালাও
নেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের মতো এই বছরও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে জঙ্গলমহল উত্সব হচ্ছে ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ময়দানে। এবার উত্সবের দ্বিতীয় বর্ষ। ৫ জানুয়ারি উত্সবের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ওই দিন মেদিনীপুর শহরে পুলিশের একটি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে জঙ্গলমহল উত্সবের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, পাহাড়ের মতো জঙ্গলমহলও মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম প্রিয় জায়গা। তাই মত বদলাতে কতক্ষণ! উত্সবের আগের দিন মুখ্যমন্ত্রী এলে তাঁর পার্ষদ-অনুচর ও আমলাদের থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। সেই জন্যই এমন পদক্ষেপ।
কিন্তু প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে আখেরে পর্যটন ব্যবসার উপর সরাসরি আঘাত পড়ছে বলে অভিযোগ। পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, প্রশাসনের সঙ্গে ঝগড়া করে ব্যবসা করা অসম্ভব।। তাই বাধ্য হয়েই এমন নির্দেশ মেনে নিতে হচ্ছে। আগাম বুকিং বাতিল হলে লজ-হোটেলেরই বদনাম হচ্ছে। গত বছরও জঙ্গলমহল উত্সবের সময় ঝাড়গ্রামের অধিকাংশ লজ হোটেলের দখল নিয়েছিল প্রশাসন। গতবারও মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুর থেকে উত্সবের উদ্বোধন করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে এলে রাজবাড়ির অতিথিশালার ভিআইপি স্যুইটে থাকেন। এ বার উত্সবের আগের দিন ৪ জানুয়ারি থেকে শেষ দিন ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজবাড়িতে কোনও অগ্রিম বুকিং নেওয়া হচ্ছে না। রাজবাড়ি সংলগ্ন পর্যটন দফতরের নতুন সরকারি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সটিও ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি কেবলমাত্র প্রশাসনের বুকিং থাকছে। বন উন্নয়ন নিগমের সরকারি ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটিও ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য অগ্রিম বুকিং দেওয়া হচ্ছে না। বেসরকারি লজ-হোটেলগুলির কয়েকটি নেওয়া হচ্ছে ৩ জানুয়ারি থেকে। কোনওটি আবার নেওয়া হচ্ছে ৪ জানুয়ারি থেকে। বাকিগুলি উত্সবের দিন ৫ জানুয়ারি থেকে নেওয়া হচ্ছে। ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি শহরের একটি ধর্মশালাও প্রশাসনিক হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি লজ-হোটেলগুলি সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, “শহরের যে কয়েকটা হাতে গোনা লজ-হোটেলে পর্যটকদের থাকার ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগই উত্সবের সময় প্রশাসন নেবে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। ওই সময় বুকিং বাতিল হওয়ায় পর্যটকরা তো হতাশ হবেনই। আমাদের প্রশাসনের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হবে।” ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি হোটেলের মালিক মৃণ্ময় কুণ্ডু বলেন, “৫ থেকে ৯ জানুয়ারি আমার হোটেলের সব ক’টি ঘর নেওয়ার জন্য প্রশাসন চিঠি ধরিয়েছে। কিছু ঘরে লোকজন রয়েছেন, যাঁরা আরও বেশ কিছুদিন থাকবেন। বাকি ঘরগুলিতে অগ্রিম বুকিং রয়েছে। কী যে করব ভেবে পাচ্ছি না।”
ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “জঙ্গলমহল উত্সবের প্রচার যেভাবে করা হয়েছে, তাতে বহু পর্যটক উত্সবের দিনগুলিতে ঝাড়গ্রামে থাকতে চাইছেন। এই বিষয়টিও প্রশাসনের ভেবে দেখা প্রয়োজন।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বিশ্বনাথ পাল বলেন, “জঙ্গলমহল উত্সবে অনেক শিল্পী আসবেন। আধিকারিকরাও আসবেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেটুকুই নেওয়া হচ্ছে।” পর্যটন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় সরকারি লোকজনের থাকার জন্য লজ-হোটেল নেওয়া হয়। হোটেল মালিকরা নির্ধারিত দরে ভাড়ার টাকাও পেয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy