Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

লাচ্ছার স্বাস্থ্য দেখবে প্রশাসন

কী করছে জেলা প্রশাসন? শুক্রবার জেলা সভাধিপতি রেহানা খাতুন বলেন, ‘‘লাচ্ছার মতো খাবারে ভেজাল স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এ নিয়ে প্রচার করাও হয়েছে আগে।’’

পায়ে-পায়ে: একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা। নিজস্ব চিত্র

পায়ে-পায়ে: একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

চারটি খুঁটির উপরে ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী কারখানা। অপরিষ্কার মেঝেতে

ফেলে ময়দা মাখা হচ্ছে নোংরা জলেই। এর পরে নিম্ন মানের তেল জাতীয় জিনিস মাখানো হয় তাতে। নরম করতে অস্বাস্থ্যকর ভাবে পা দিয়ে মাড়ান কারিগরেরাই। কোনও গ্লাভস ব্যবহার করা হয় না এ ক্ষেত্রে। এর পরে লাচ্ছার সুতো তৈরির পালা। মেঝেতে ফেলেই চলে সে কাজ। এ ভাবেই উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, বসিরহাট, শাসন, গোলাবাড়ি এলাকায় ঢুকলে চোখে পড়বে রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা।

কী করছে জেলা প্রশাসন? শুক্রবার জেলা সভাধিপতি রেহানা খাতুন বলেন, ‘‘লাচ্ছার মতো খাবারে ভেজাল স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এ নিয়ে প্রচার করাও হয়েছে আগে।’’

রোজার শেষে সামনে খুশির ইদ। প্রতিবেশী, বন্ধু এবং আত্মীয়দের মিষ্টিমুখ করিয়ে উৎসবের উদ্‌যাপন হবে ওই দিন। তারই প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হচ্ছে ইদের মিষ্টি লাচ্ছা। অভিযোগ, বাজারে লাচ্ছার চাহিদা এতই যে যোগানে পাল্লা দিতে নেমে পড়েছেন বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। নিম্ন মানের উপাদান ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি লাচ্ছার জন্য বদনাম হচ্ছে আসল লাচ্ছার।

এমনই অভিযোগ করছেন দীর্ঘ দিন ধরে লাচ্ছা তৈরিতে যুক্ত ব্যবসায়ীদের একাংশ। এর আগেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বহুবার সিআইডি এবং জেলা পরিষদ থেকে হানা দিয়ে ভেজাল খাবার তৈরির বিভিন্ন কারখানায় ধর-পাকড় হয়েছে। বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে ভেজাল করাখানা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশ কিছু জায়গায় চলছে এই অসাধু ব্যবসা। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন এলাকায় লাচ্ছার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রখ্যাত সংস্থার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান চাহিদায় পাল্লা দিয়ে চলেছে স্থানীয় লাচ্ছাও।

স্থানীয়েরা ছাড়াও এই জেলায় লাচ্ছা তৈরির কাজ করতে বিহার থেকে আসেন বহু মানুষ। বিহারের মুঙ্গের জেলার ধামর ও আকবরপুর থেকে আসা লাচ্ছা কারিগরদের কথায়, ‘‘পেটের টানে কাজ করতে আসি। কী জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে আমরা ভাবব কেন?’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লাচ্ছা কর্মী জানান, বেশি লাভের জন্য মালিকের নির্দেশে বাজার থেকে নিম্ন মানের তেল ও ময়দা কিনতে বাধ্য হন তাঁরা।

শাসন থানার গোলাবাড়ির বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, ‘‘আগে ইদের প্রধান মিষ্টি ছিল ক্ষীর। আত্মীয়স্বজনকে ক্ষীর দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রথা কমলেও তা এখনও আছে। সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে লাচ্ছা। ছোটদেরও পছন্দের এই মিষ্টি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্ন মানের জিনিস দিয়ে তৈরি হলে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’ গোলাবাড়ির একটি লাচ্ছা কারখানার মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘‘আমরা লাচ্ছা তৈরিতে ভাল জিনিস ব্যবহার করি।’’

সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সর্ষের তেল, পাম তেল কারখানায় হানা দেয় সিআইডি। বন্ধ করে দেয় ভেজাল তেলের কারখানা। লাচ্ছার ক্ষেত্রেও তেমনই নজরদারির দাবি করেছেন স্থানীয়েরা। লাচ্ছায় ভেজাল নিয়ে অভিযোগের তদন্ত হবে বলে জানান জেলার সভাধিপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lacchha Sewai লাচ্ছা Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE