—ফাইল চিত্র।
বছর দশেক আগে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন বর্ধমানের এক স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চলতি মাসে ওই শিক্ষকের চাকরি পেলেন তাঁর ছেলে।
আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, তাঁর মক্কেল মহম্মদ জাহিরুদ্দিনের বাবা হানিফ মণ্ডল বর্ধমানের কাঁকসা সার্কেলের হাজরাবেড়া প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৭ সালে তিনি জেলা প্রাথমিক সংসদ কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তাঁর পক্ষে আর শিক্ষকতা করা সম্ভব নয়। তাঁকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। একই সঙ্গে তিনি আবেদন জানান, তিনি যে-পদে নিযুক্ত আছেন, সেই চাকরি দেওয়া হোক তাঁর ছেলে জাহিরুদ্দিনকে।
শুরু হয় টালবাহানা। আইনজীবী জানান, স্বেচ্ছাবসর চেয়ে ওই বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে চার-চার বার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে চিঠি দেন হানিফ। কিন্তু সংসদ-কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বোর্ড গড়ার বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করতে থাকেন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের পরে তারা পরীক্ষা করে দৃষ্টিশক্তিহীনতার শংসাপত্র দিলে তবেই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন গৃহীত হওয়ার কথা। বোর্ড গড়তে সংসদের গড়িমসি দেখে ওই শিক্ষক নিজেই দুর্গাপুর সদর হাসপাতালে চলে যান এবং সেখান থেকে দৃষ্টিশক্তি হারানোর শংসাপত্র জোগাড় করেন। সেই শংসাপত্র দেখে জেলা প্রাথমিক সংসদ হানিফকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু সংসদ-কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দেন, তাঁর ছেলে জাহিরুদ্দিন ওই চাকরি পাবেন না।
ছেলেকে চাকরি না-দেওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক সংসদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হানিফ ও জাহিরুদ্দিন। গত বছর বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে সেই মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে আইনজীবী এক্রামুল জানান, কর্মরত অবস্থায় শারীরিক ভাবে কেউ অক্ষম হয়ে পড়লে শিক্ষা দফতরের নিয়ম অনুযায়ী (যোগ্যতা থাকলে) তাঁর ছেলে বা মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা। কিন্তু হানিফের ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক সংসদ সেই নিয়ম মানছে না। বিচারপতি বসাক জেলা সংসদের সিদ্ধান্ত খারিজ করে নির্দেশ দেন, জাহিরুদ্দিনের আবেদন পুনরায় বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রাথমিক সংসদ জাহিরুদ্দিনের আবেদন অনুমোদনের জন্য রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তার কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা অধিকর্তা সেই আবেদন অনুমোদন করেননি। তার পরে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এক্রামুল জানান, গত ৬ ডিসেম্বর শুনানিতে শিক্ষা অধিকর্তা আদালতে হাজির হয়ে জানান, জাহিরুদ্দিনকে তাঁর বাবার চাকরিটিই দেওয়া হবে। ৯ ডিসেম্বর নিয়োগপত্র পেয়েছেন জাহিরুদ্দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy