এ রাজ্যের আইনজীবীদের দিয়ে হয়নি। তাই মন্ত্রী মদন মিত্রের জামিন পেতে দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল জাঁদরেল আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বলকে। যিনি এর আগেও সারদা মামলায় রাজ্য সরকারের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিলেন।
কিন্ত সেই সিব্বলেও শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার মদন এবং সিবিআই, আড়াই ঘণ্টা ধরে দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পরে সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত মদন মিত্রের জামিনের আর্জি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি আশা অরোরার ডিভিশন বে়ঞ্চ।
শুনানি শুরু হওয়ার কথা সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। কিন্তু তার ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই ভিড় জমতে থাকে হাইকোর্টের ১৭ নম্বর ঘরে। সিব্বল যখন এলেন, তখন সাংবাদিক থেকে আইনজীবীদের ভিড়ে ঠাসা আদালত কক্ষ। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী সওয়াল শুরু করতেই শুরু হয় গুঞ্জন, ঠেলাঠেলি। থেমে যান সিব্বল। পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলে ফের বলতে শুরু করেন সিব্বল। এবং ফের শুরু হয় ঠেলাঠেলি। ঠেলাঠেলির চোটে ভেঙে যায় আদালত কক্ষের একটি আলমারির কাচ। বিরক্ত হয়ে বিচারপতি নিশিথা মাত্রে এজলাস ছেড়ে বেরিযে যান। মিনিট পনেরো পর দরজা বন্ধ করে ফের শুরু হয় শুনানি। বারান্দায় তখন শ’পাঁচেক লোকের ভিড়। আড়াই ঘণ্টা দুই দুঁদে আইনজীবীর ‘লড়াই’ চলতে থাকে।
মন্ত্রী মদন মিত্র যে প্রভাবশালী, তা বারেবারেই বিভিন্ন আদালতে দাবি করেছিলেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলিরা। এ দিন সিব্বল অবশ্য তাঁর সওয়াল শুরু করেন সেই প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ করা দিয়েই। শুধু তাই নয়, জামিনের শর্ত হিসেবে মন্ত্রিত্ব পদ থেকেও মদন ইস্তফা দিতে রাজি বলে জানান তিনি। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, মদন মিত্র চরম স্তর পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। তাই জেল থেকে তাঁকে ছাড়া উচিত হবে না। এবং এই প্রসঙ্গেই তিনি তুলে ধরেন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত মদনের ‘ঠিকানা’কে।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল মদন মিত্রকে। মাস দুয়েক জেলে কাটিয়ে তিনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন এবং ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালে। তখন থেকে এ দিন পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডেই রয়েছেন মদন। এ দিন সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, মদন ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর ঠিক কী হয়েছে, এ কথা কেউ জানে না। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি মাত্রে মদনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, মদন এত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কেন? কী হয়েছে তাঁর? সিব্বল তাঁর মক্কেলের মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন এবং বলেন, সিবিআই কেন মদনকে হাসপাতাল থেকে জেলে পাঠানোর জন্য আবেদন করছে না! দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পরে বিচারপতি মদনের জামিনের আর্জি খারিজ করে দেন।
মদন মিত্রের জামিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আদালতে টানাপড়েন চলছে। এর আগে মদনের জামিনের সওয়ালে আদালতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন তাঁর আর এক আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়। হাইকোর্টেও একাধিক বিচারপতি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মদনের জামিনের আর্জি শুনতে চাননি। তাই এ দিন মদন মিত্রের জামিনের আর্জির শুনানি নিয়ে হাইকোর্টে সংবাদমাধ্যম এবং উৎসাহীদের ভিড় ছিল। হাজির হয়েছিলেন মদন অনুগামীদের একাংশও। তার ফলে এজলাসে প্রচণ্ড ভিড় হয়। শোরগোলও পড়ে। তার ফলে বিচারপতি মাত্রে শুনানি সাময়িক ভাবে স্থগিত করেন। পরে ভিড় হটিয়ে এজলাস কক্ষের দরজা বন্ধ করে ফের শুনানি শুরু করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy