Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ডাইনি’ অপবাদ মাথায় নিয়েই সফল বাসন্তী

নিজেদের সুস্থ দিনযাপনের এই আয়োজনটুকুর জন্যই গ্রামের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে কিস্কু পরিবার। কিস্কুদের জব্দ করার জন্য গ্রামবাসীদের একাংশ জোট বেঁধে ওই পরিবারের মেয়েদের ‘ডাইনি’ তকমা দেয়।

বাসন্তী কিস্কু

বাসন্তী কিস্কু

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবারের প্রতিবন্ধকতা ঠেলে শিক্ষাদীপ হাতে তুলে নিয়ে নজর কেড়েছে অনেকেই। তাদের মধ্যেও বেশ কয়েক জনের কৃতিত্ব বেশি উজ্জ্বল শুধু সেই সব বাধার অধিকতর কঠিনতার জন্যই।

বীরভূমের বিনোদপুর গ্রামের কিস্কু পরিবার পরের জমিতে কাজ করে নিজেদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করেছিল। বানিয়েছিল শৌচালয়। নিজেদের শ্রমে নিজেদের মাথা গোঁজার এই সংস্থানটুকু, নিজেদের সুস্থ দিনযাপনের এই আয়োজনটুকুর জন্যই গ্রামের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে কিস্কু পরিবার। কিস্কুদের জব্দ করার জন্য গ্রামবাসীদের একাংশ জোট বেঁধে ওই পরিবারের মেয়েদের ‘ডাইনি’ তকমা দেয়। পরিবারের এক বৃদ্ধাকে এমন মারধর করা হয় যে, পরের দিনই মারা যান তিনি। পরিবারের অন্য মেয়েদেরও মেরে আধমরা করে ফেলে রেখে যায় গ্রামবাসীরা। ২০১৫ সালের এই ঘটনার পর থেকে পরিবারটি এখনও একঘরে।

এ বছর সেই কিস্কু পরিবারের কিশোরী বাসন্তী ‘ডাইনি’ অপবাদ মাথায় নিয়েই মাধ্যমিক পাশ করেছে। ২০১৫-র ঘটনার পর থেকে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত সে।

আরও পড়ুন
শহরের কাছেই ডাইনি অপবাদে মার, ধৃত ওঝা

বাসন্তীর মতোই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় উতরে গিয়েছে বর্ধমানের কুলারা গ্রামের অঞ্জলি মান্ডি। মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক ১৫ দিন আগে নিজের বিয়ে রুখে দেওয়ায় আত্মীয়স্বজন, পড়শিরা একঘরে করে রেখেছে এই সাঁওতাল পরিবারটিকে। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয় পরিবারকে। গত বুধবার অঞ্জলি এবং তার বোনের জলবসন্ত হয়। তার পরে গ্রামের আরও দু’-এক জন ওই রোগে আক্রান্ত হন। তার জন্য অঞ্জলিকেই দায়ী করে তার মাকে মারধর করা হয়। মোড়ল নিদান দেন, পুজো দিয়ে এই বসন্ত ‘ছড়ানো’ বন্ধ করতে হবে অঞ্জলির পরিবারকে। নইলে তাদের গ্রামছাড়া করা হবে। পরিবারটি থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। কিন্তু থানায় এফআইআর না-করে সাধারণ অভিযোগ দায়ের করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অত্যাচারিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে, স্কুল পাল্টে মাধ্যমিকে সফল হয়েছে বর্ধমানের মেমারি থানার সোনালি কিস্কু (নামবদল)। ২০১৪-য় ধর্ষণের শিকার হয় সে। অভিযুক্ত পড়শি যুবক ধরা পড়লেও গ্রাম ও স্কুল ছাড়তে হয় সোনালিকে। মাজুরিয়ায় আবাসিক স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়তে থাকে সে। মাধ্যমিকে সফল সোনালিও।

‘কন্যাশ্রী’র সুবিধা পায়নি এই তিন কন্যে। তাই এর পরে কী ভাবে পড়াশোনা হবে, তিন পরিবারের চিন্তা সেটাই। রাজ্য মহিলা কমিশন স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে তিন জনকেই স্কুলে ফেরত পাঠিয়েছিল। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের আশা, এ বার সরকারি সাহায্য পাবে এই তিন লড়াকু মেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Torture Superstition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE