Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মমতার সভায় প্রশাসনের বাস, সওয়ার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা

স্থানীয় এক নেতা বলছেন, ‘‘ওই ৯৫টা বাসের গোটা চল্লিশ তো আমরাই দলীয় কর্মীদের জন্য নিয়েছি।’’ নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘অত হিসেব দিতে পারব না।’’

সেই সব বাস। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সেই সব বাস। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

মনিরুল শেখ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভার জন্য বাস নিয়েছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন। কিন্তু তার একটা বড় অংশই চলে গিয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের দখলে। কোনও রকম লুকোছাপা করে নয়, বরং বাসে ঝান্ডা উড়িয়ে, ব্যানার ঝুলিয়ে মঙ্গলবার নানা এলাকা থেকে তাঁরা কৃষ্ণনগরে সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ভরিয়েছিলেন। বাসে টান পড়ায় অন্য জেলা থেকেও আনতে হয়েছিল বাস।

শুধু কৃষ্ণনগর ২ ব্লক থেকে সভায় লোক আনার জন্য সরকারি ভাবে বুক করা হয়েছিল ৩২টি বাস। তার মধ্যে ব্লক অফিস ব্যবহার করেছে ১৪টি। বাকি ১৮টির দখল নিয়েছিল শাসক দলের কর্মীরা। নাকাশিপাড়া ব্লক অফিস সূত্রে খবর, বুক করা বাসের সংখ্যা ৯৫। তবে স্থানীয় এক নেতা বলছেন, ‘‘ওই ৯৫টা বাসের গোটা চল্লিশ তো আমরাই দলীয় কর্মীদের জন্য নিয়েছি।’’ নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘অত হিসেব দিতে পারব না।’’

বাসে টান পড়ায় শেষতক তাই হাত পড়েছিল পড়শি বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও। নদিয়ার এক এক পদস্থ জেলা কর্তা বলছেন, ‘‘সভার জন্য সরকারি ভাবে যে সংখ্যক বাস নেওয়া হয়েছে, শাসক দলের নেতারাই তার অর্ধেক নিয়ে গিয়েছেন।’’

পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা যে কার্যত রাজনৈতিক জনসভায় পরিণত হতে পারে, বিরোধীরা তেমন আশঙ্কা করছিল। কেন না, গত কয়েক দিন ধরেই নদিয়ার ১৭টি ব্লক ও পুরসভা এলাকাগুলি থেকে জনসভায় লোক আনার তোড়জোড় চলছিল। কোন এলাকা থেকে কার নেতৃত্বে কত জন যাবে, কোথায় কতগুলি বাস লাগবে হিসেব কষতে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূল নেতারা। শুধু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাস বোঝাই সমর্থক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক ছাত্রনেতা।

সভার দেড়-দু’ঘণ্টা আগে থেকেই একের পর পর বাস এসে থেমেছে শহরের চৌহদ্দিতে আর দলে-দলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা নেমে মিছিল করে ময়দানের দিকে এগিয়েছেন। এ দিকে রুটের বাস না পেয়ে জেলা জুড়ে ভোগান্তি পুইয়েছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও বাস না পেয়ে অনেকে ফিরে গিয়েছেন। যাঁদের যে ভাবে হোক যেতেই হত, তাঁরা অনেক বেশি ভাড়া গুনে অটো বা টোটোয় যাতায়াত করেছেন।

নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার অভিযোগ, ‘‘সরকারি খরচে প্রশাসনিক জনসভার নামে নির্বাচনী সভা করে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সভার গোড়াতেই টিএমসিপি-র এক দল নেতা-সমর্থক ঝান্ডা হাতে মূল মঞ্চের প্রায় কাছে চলে গিয়েছিলেন। সংগঠনের জেলা সভাপতি কোনও রকমে নিরস্ত করেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য হাল্কা চালে বলেন, ‘‘বাংলার এক নম্বর জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে দেখতে তো লোকে যাবেই। এতে আর বলার কী আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE