Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গরাদে দাঁতে শান মুসার, ভয়ে কাঁটা রক্ষীরা

বন্দিদশাতেও মুসা নিজের এমন ভীতিপ্রদ ভাবমূর্তি খাড়া করেছে যে, আলিপুর জেলে তার সেলে পাহারা দেওয়ার জন্য কারারক্ষী কার্যত পাওয়াই যাচ্ছে না। কারণ মুসা কখন কী করবে— কেউই জানেন না।


ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share: Save:

প্রাণপণে গরাদ কামড়াচ্ছে বন্দি।

কারারক্ষী জিগ্যেস করলেন, ‘‘কী রে! গরাদ কামড়াচ্ছিস কেন?’’

খিঁচিয়ে উত্তর দিল বন্দি, ‘‘দাঁতে ধার দিচ্ছি। নাগালে পেলেই তোদের কামড়ে দেব। মেরে ফেলব।’’

বন্দির জবাব শুনে কারারক্ষীরা থ! যারপরনাই ভয়ও পেয়েছেন তাঁরা। কারণ, এ তো যে-সে বন্দি নয়। এ রাজ্যে প্রথম ধৃত সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি, বীরভূমের মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু মুসা। সে যে কামড়ে দেওয়ার মতো বা তার থেকেও ভয়াবহ আক্রমণ করতে পারে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন কারারক্ষীরা। গত ৩ ডিসেম্বর এক কারারক্ষীর মাথায় পাথর দিয়ে এবং জেলে বসে তৈরি করা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছিল মুসা।

বন্দিদশাতেও মুসা নিজের এমন ভীতিপ্রদ ভাবমূর্তি খাড়া করেছে যে, আলিপুর জেলে তার সেলে পাহারা দেওয়ার জন্য কারারক্ষী কার্যত পাওয়াই যাচ্ছে না। কারণ মুসা কখন কী করবে— কেউই জানেন না।

ডিসেম্বরে তার আক্রমণে গুরুতর আহত হন গোবিন্দ দে নামে এক কারারক্ষী। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন মহম্মদ সোহেল ওরফে পিন্টু নামের অন্য এক বন্দিও।

মুসা পাথর দিয়ে গোবিন্দবাবুর মাথায় আঘাত করেই ক্ষান্ত হয়নি। জেলে বসে চামচ ঘষে ঘষে তৈরি করা ধারালো অস্ত্র দিয়েও তাঁকে আঘাত করে। তার পর থেকেই জেল-কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিতে রয়েছে মুসা।

আলিপুর জেলে নিরাপত্তার নিরিখে সব চেয়ে ‘হাইপ্রোফাইল’ বন্দি আফতাব আনসারি রয়েছেন এক নম্বর সেলে। তার ঠিক উপরের সেলে রাখা হয়েছে মুসাকে। সম্পূর্ণ পৃথক ওই সেলে ২৪ ঘণ্টা তার উপরে নজর রাখা হচ্ছে। সেলের বাইরে তাকে কার্যত বারই করা হচ্ছে না। বার করা হলেও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হচ্ছে।

এই নিয়েও আবার বৃহস্পতিবার বিচারকের সামনে অভিযোগ জানায় মুসা। ওই বন্দির অভিযোগ, তার দু’হাতে, দু’পায়ে ২৪ ঘণ্টা বেড়ি পরিয়ে রাখা হচ্ছে। শুধু খুলে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময়ে। আর খাওয়ার সময়ে শিকল এমন ভাবে পরানো থাকে যে, দু’হাতই ব্যবহার করতে হয়।

কারা দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘এই অভিযোগ মোটেই ঠিক নয়। আবার ওকে একেবারে ছেড়ে রাখা হচ্ছে, এটাও ঠিক নয়। ছেড়ে রাখলে ওই অভিযুক্ত যে কী করতে পারে, তার নজির তো আমরা পেয়েছি। আবার ধরে রাখা অবস্থাতেও ও খুব ‘সেফ’ নয়।’’

জেল-কর্তারা জানাচ্ছেন, আদালত মুসাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর পরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে বলা হয়েছিল, মুসা খুবই হিংস্র প্রকৃতির। তার উপরে যেন আলাদা নজরদারির বন্দোবস্ত করা হয়। ওই জেল-কর্তা বলেন, ‘‘ওই অভিযুক্ত প্রথম দিকে সেলে আবোল-তাবোল বকত। প্রশাসনকে গালাগাল করত। তবে কাউকে সে-ভাবে আক্রমণ করেনি। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, ততই ও হিংস্র হয়ে উঠতে শুরু করে।’’

জেলের ওই কর্তা জানান, মুসা প্রায়ই নজরদারির দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের হুমকি দেয়, সুযোগ পেলেই সে আঁচড়ে-কামড়েই তাঁদের মেরে ফেলবে। এক কারারক্ষী বলেন, ‘‘থেকে থেকেই সেলে বসে মুসা বলে, ‘কাউকে ছাড়ব না। সুযোগ পেলে যাকে সামনে পাব, কামড়ে মেরে ফেলব’।’’ তাই ওকে নিয়ে ভয়ের শেষ নেই কারারক্ষীদের। এই অবস্থায় মুসাকে কী ভাবে রাখা হবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না জেল-কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE