Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অরিজিতের দেহ পৌঁছল নলহাটির বাড়িতে

ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স চালু করার দাবি

এক বছর আগে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার মলুটি গ্রামের চুমকি লেটকে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয় বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে। নার্সিংহোমের বিল না মেটানো পর্যন্ত আটকে রাখা হয় চুমকিকে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

এক বছর আগের স্মৃতি উস্কে দিল নলহাটির মেধাবী ছাত্র অরিজিৎ দাসের মৃত্যু। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিজিতের মৃত্যু ঠিক কী কারণে হয়েছে তা এখনও তদন্ত-সাপেক্ষ। শনিবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এই ছাত্রের দেহ নলহাটির বাড়িতে পৌঁছয়। কিছু পরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় অরিজিতের স্কুল নলহাটির ভবানন্দপুর হাইস্কুলে। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তার বাবা-মা। এ দিকে, এই মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসার গাফিলতি-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে।

এক বছর আগে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার মলুটি গ্রামের চুমকি লেটকে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয় বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে। নার্সিংহোমের বিল না মেটানো পর্যন্ত আটকে রাখা হয় চুমকিকে। তার জেরে আত্মঘাতী হন চুমকির বাবা। এমনই অভিযোগ পরেও এসেছে একাধিকবার। অবস্থা দেখে রামপুরহাট হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবায় ‘জিপিএস সিস্টেম’ চালু করা হয়। কিন্তু, ফের একই অভিযোগ উঠেছে অরিজিতের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও। যদিও অরিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত রামপুরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বা রামপুরহাট হাসপাতালের সুপারের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।

একই রকম প্রশ্নের মুখে জেলার ‘ট্রমা কেয়ার’ পরিষেবাও। বছরখানেক আগে বীরভূমের সীমান্তবর্তী নলহাটি থানার নাকপুর চেকপোস্ট পেরিয়ে পথ দুর্ঘটনায় আহত এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার পিজি হাসপাতালে। কিন্তু, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির আঘাত এতই গুরুতর ছিল যে আইসিসিইউ পরিষেবাযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স বা ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ ছাড়া কলকাতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আহতের আত্মীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম এই দুই জেলার কোথাও সরকারি বা বেসরকারি পরিষেবা দিতে সক্ষম ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ নেই। পরিবর্তে মালদহ থেকে একটি বেসরকারি ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ এনে বহরমপুর থেকে আহত ব্যক্তিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। খরচ পড়ে ২৫ হাজার টাকা। আবারও তাঁকে কলকাতা থেকে একটি ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ ভাড়া করে রামপুরহাট নিয়ে আসা হয়। ফের একই খরচ হয়।

রোগীর পরিজনেরা দাবি করেছিলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ চালু হলেও সেখানে কোনও ‘ট্রমা কেয়ার সেন্টার’ নেই। এ দিকে, ২০১৯ সালে চালু হতে চলা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ চললেও সেখানে এখনও পর্যন্ত নেই কোনও ট্রমা কেয়ার সেন্টার। বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের রোগীদের তাই তাকিয়ে থাকতে হয় বর্ধমান ও মালদহের দিকে। রামপুরহাট এবং বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকেরা অবশ্য মনে করছেন, রামপুরহাটে যেহেতু মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে, তাই মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে সংযোগ রেখেই ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ চালু হবে।

গত বিধানসভা অধিবেশনে জেলার হাঁসন কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ প্রশ্নোত্তর পর্বে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ গড়ে তোলার দাবি জানান। এ ব্যাপারে মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ খোলার ব্যাপারে খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ বার এলাকায় একটি ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ পরিষেবা চালু করার ব্যাপারেও উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE